রাজৈরে টানা চার দিন সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আতঙ্কে অর্ধশত দোকান বন্ধ

মাদারীপুরের রাজৈরে এখনো দুই গ্রামের পরিবেশ থমথমে। ফের সংঘর্ষের আতঙ্কে পশ্চিম রাজৈর বাজারে প্রায় অর্ধশত দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা—এই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের টানা চার দিনব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে ৪২ জনকে এজাহারভুক্ত ও ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের পর এখনো দুই গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আবার সংঘর্ষের আতঙ্কে পশ্চিম রাজৈর বাজারে প্রায় অর্ধশত দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এর আগে এ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে রাজৈর বাজার, পশ্চিম রাজৈর, বদরপাশা ও গোপালগঞ্জ এলাকায় গতকাল সোমবার বেলা একটা থেকে দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহফুজুল হক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের তৃতীয় দিন (২ এপ্রিল) আতশবাজি ফাটানোকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিকভাবে চার দিন রাজৈর উপজেলার ব্যাপারীপাড়া মোড়ে পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের দুটি গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রায় ২৫টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সংঘর্ষে মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষ, দুই এসআই তারেক ও মোস্তফা, পুলিশের গাড়িচালক শাহাবুদ্দিন ও আরও ১০ পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কেউ কোনো মামলা না করায় পুলিশ বাদী হয় একটি মামলা করে। তবে এ মামলায় পুলিশ কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আবার সংঘর্ষের ভয়ে দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন।

সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ভাতের হোটেল ব্যবসায়ী নিরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘আমার দোকানে থাকা তিন বস্তা চাল, হাঁড়িপাতিল ও তেল লুট হয়ে গেছে। দোকানের টিন ভাঙচুর করা হয়েছে। নতুন করে আবার সংঘর্ষ বাধতে পারে। তাই ভয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খোলেননি। কিন্তু আমার দোকান খুলতে হইছে। কারণ, আমার এই ব্যবসার ওপরেই ছেলেমেয়ের পড়ালেখাসহ সব খরচ চালাতে হয়। এই দোকান ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতেছে, আর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।’

রাজৈর বাজার বণিক সমিতির সদস্য ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ইমাম শাহরিয়ার বলেন, ‘দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় বাজারের দোকানগুলোয় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। এ জন্য এখনো ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমার টিভি, ফ্রিজসহ ইলেকট্রনিকসের পণ্যের শোরুমে ভাঙচুর ও লুটপাট করায় প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় বণিক সমিতির পক্ষ থেকে বিচার ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। তবে এ মামলাসংক্রান্ত কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আবার সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।