ভুক্তভোগীকে ছাত্রলীগের তুলে দেওয়া শিক্ষার্থীর সঙ্গে শয্যা ভাগাভাগি করতে বললেন প্রাধ্যক্ষ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে ছাত্রলীগের তুলে দেওয়া শিক্ষার্থী কক্ষ থেকে নামেননি। ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভুক্তভোগীকে শয্যা ভাগাভাগি করে থাকতে বলেছেন হল প্রাধ্যক্ষ।

এদিকে মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর থানায় দেওয়া অভিযোগটি এখনো মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। ওই শিক্ষার্থী চাইলে অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

গত রোববার রাতে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষ থেকে ফয়সাল আহম্মেদ নামের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের পর বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মনিরুল ইসলাম ওরফে স্বপনের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় সেদিন রাতেই নগরের মতিহার থানায় মনিরুলের নাম উল্লেখসহ ২০ থেকে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে তিনি একটি অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে ১২ মার্চ ওই নেতার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ করা হয়।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে হল প্রাধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম বলেন, হলের তিনতলা থেকে ৪০৪ নম্বর কক্ষে আসা শিক্ষার্থীর আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৩৩৭ নম্বর কক্ষে। কিন্তু সেখানে তিনি থাকতে পারেননি। আর ফয়সালের আসন দেওয়া হয়েছিল ৪০৪ নম্বর কক্ষে। দুজনই আবাসিক শিক্ষার্থী। থানায় অভিযোগ দেওয়া হলেও ওই দুই শিক্ষার্থীর একজনও তাঁকে (প্রাধ্যক্ষ) লিখিত কোনো অভিযোগ দেননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছেও কোনো অভিযোগ দেননি। আজ দুজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা আপাতত একই কক্ষে থাকবেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখান থেকে একজনকে সরিয়ে অন্য কক্ষে নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তে তাঁরাও রাজি হয়েছেন।

এর আগে গত রোববার থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে ফয়সাল উল্লেখ করেন, ১২ মার্চ রাত সাড়ে আটটার দিকে শহীদ হবিবুর রহমানের হলের ৪০৪ নম্বর কক্ষে মনিরুল ইসলাম এসে তাঁকে বলেন, ‘তুমি এখন রুম থেকে বের হয়ে চলে যাও, না গেলে তোমাকে প্রাণে মেরে ফেলব।’ ‘তোমাকে বাঁচানোর মতো কেউ নাই,’ বলে অন্য একজনের বিছানাপত্র তাঁর কক্ষে রেখে চলে যান। এরপর ২৬ মার্চ রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি আবার আসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন ছিলেন। স্বপন কক্ষে এসে তাঁকে বলেন, ‘তোকে না রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলাম? তুই এই রুমে এখনো কী করিস? হল কি তোর বাপের, আমার এই ব্লকে থাকতে হলে আমাকে টাকাপয়সা দিয়ে থাকতে হবে।’ এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তিনি তাঁর পোশাক ধরে কক্ষ থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করার চেষ্টা করেন। বের হতে না চাইলে তাঁরা তাঁকে এলোপাতাড়ি মারধর করেন। মনিরুল লাঠি দিয়ে তাঁকে সজোরে আঘাত করেন। এতে তাঁর ডান হাতে আঘাত লাগে। পরে তাঁরা তাঁর বিছানাপত্র বের করে বাইরে ফেলে দেন। আশপাশের অন্যরা এগিয়ে এলে তাঁরা হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরে অন্যদের সহযোগিতায় তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

ফয়সাল আজ প্রথম আলোকে বলেন, আজ তাঁকে প্রাধ্যক্ষ ডেকেছিলেন। তাঁকে আপাতত কয়েক দিন আসন ভাগাভাগি করে থাকতে বলেছেন। এ ছাড়া তিনি আজ থানায়ও গিয়েছিলেন। পুলিশ জানতে চেয়েছে, মামলা করব কি না। তিনি একটু সময় চেয়েছেন। আসনের সমস্যার সমাধান না হলে মামলায় সায় দেবেন। হলে থাকতে কোনো ভয় কাজ করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এত মানুষ এনে মনিরুল মারধর করলেন, হুমকি দিলেন। ভয় কাজ করছে। আবার যদি দলবল নিয়ে হামলা করেন।’

এ বিষয়ে আজ মনিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গত রোববার রাতে মুঠোফোনে দলবল নিয়ে ৪০৪ নম্বর কক্ষে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন তিনি। তবে প্রাণনাশের হুমকি ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন মনিরুল।

আরও পড়ুন

নগরের মতিহার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগকারী শিক্ষার্থী আজ দুপুরে থানায় এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, ঘটনাটি মীমাংসার দিকে যাচ্ছে। আপাতত মামলা না নেওয়ার কথা বলেছেন। এখন ওই শিক্ষার্থী চাইলেই অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর করা হবে।