টেকনাফে প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শন চীনা রাষ্ট্রদূতের, রোহিঙ্গাদের মধ্যে আলোচনা

টেকনাফের কেরুনতলীর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। গতকাল দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর তীরে কেরুনতলীতে নির্মিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের গতকাল শনিবার এ সফরের পর প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নানা আলোচনা চলছে।

রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বলছে, এ পরিদর্শনের পর চীনের মধ্যস্থতায় দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। অবশ্য আরেকটি পক্ষ বলছেন, এ মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মোটেও সম্ভব নয়। প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ ও পরিস্থিতি এখনো রাখাইন রাজ্যে নেই। প্রত্যাবাসন শুরুর আগে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে আগাম ঘোষণা দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল বেলা একটার দিকে চীনা রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলটি কেরুনতলী এলাকায় নির্মিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। প্রত্যাবাসন কেন্দ্র থেকে নাফ নদীর দিকে যাওয়ার জেটিও পরিদর্শন করেন তাঁরা। তবে প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন কিংবা কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেনি।

প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার খালিদ হোসেন ও টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২৫) ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) আবদুল হান্নান।

আরও পড়ুন

সিআইসি আবদুল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, চীনা রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে একটি দল টেকনাফ কেরুনতলী প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করে। এরপর টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারে ফিরে গেছেন। প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শনের বিষয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত তাঁদের কিছু বলেননি।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। মিয়ানমারের অনীহার কারণে দীর্ঘ ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। চীনা রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গাদের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা শুরু হয়েছে।

টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার চাইছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। কিন্তু এ প্রত্যাবাসনের সঙ্গে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর যুক্ত না থাকলে টেকসই প্রত্যাবাসন হবে কি না, সন্দেহ আছে। আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় সব রোহিঙ্গা রাখাইনের জন্মভূমিতে ফিরতে রাজি। তবে প্রত্যাবাসনের আগে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে।

আরও পড়ুন

বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা লাল মিয়া বলেন, এর আগেও মিয়ানমার দুবার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু প্রত্যাবাসন শুরুর মুহূর্তে নানা অজুহাতে তা ভেস্তে যায়। এবার চীনের মধ্যস্থতায় কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে মিয়ানমার নতুন ফাঁদ পাতার চক্রান্ত করছে বলে মনে করেন রোহিঙ্গারা।

পুলিশ ও আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬ মে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য সফর করে। সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল—প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন রাজ্য প্রস্তুত কি না, তা রোহিঙ্গা নেতাদের দেখানো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের বোঝাতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদলের টেকনাফে আসার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সফরটি স্থগিত হয়ে গেছে।

মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার সফরে আসার তারিখ নির্ধারিত হয়নি জানিয়ে আজ রোববার দুপুরে আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। কিন্তু সেটা কখন ও কীভাবে, তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরআরআরসি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাবাসন কেন্দ্র পরিদর্শন নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আলোচনা চললেও এ মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু সম্ভব নয়। টেকনাফ পরিদর্শনের সময় চীনা রাষ্ট্রদূত সেটি সম্ভবত অনুধাবন করতে পেরেছেন। এ কারণে তিনি আশ্রয়শিবির পরিদর্শন কিংবা রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চীনের কুনমিংয়ে গত ১৮ এপ্রিল চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মে মাসে পাইলট প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ১৭৬ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে পাঠানোর কথা ছিল। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে তাঁদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো হবে। এরপর এ বছর আরও পাঁচ ধাপে ছয় হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন হবে রাখাইনে।

আরও পড়ুন