কেটে দিয়েছে কেএনএফ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রোয়াংছড়ি-পাইংখিয়ং-রৌনিনপাড়া সড়ক

বান্দরবান জেলার মানচিত্র

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি-পাইংখিয়ং-রৌনিনপাড়া সড়কের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থান কেটে বড় বড় গর্ত তৈরি করেছেন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) অস্ত্রধারীরা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ফলমূল ও কৃষিপণ্য বিপণনে এলাকাবাসী চরম সংকটে পড়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে কেএনএফ সড়কটি কেটে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

রৌনিনপাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সড়কটি রোয়াংছড়ি-রুমা সড়ক থেকে পাইংখিয়ংপাড়া হয়ে নিনপাড়ায় গেছে। সড়কের পাইংখিয়ংপাড়া পৌঁছার আগে পাইংখিয়ংপাড়ার পরে অন্তত পাঁচটি স্থানে ইট তুলে বড় বড় গর্ত খনন করে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গর্ত খনন করা হয়েছে গত শনিবার রাতে। কেএনএফের অস্ত্রধারীরা পাড়া থেকে লোকজন ধরে নিয়ে গর্ত খনন করতে বাধ্য করেছেন। অস্ত্রধারীরা নিজেরাও খনন করেছেন। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় এলাকাবাসী আম, কাঁঠাল, কলাসহ উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন রোয়াংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান চৌহাইমং। তিনি বলেন, কেএনএফের সশস্ত্র তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকে রৌনিনপাড়া, পাইংখিয়ংপাড়া, ক্যাপলংপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পাড়ার পাড়াবাসী চরম সংকটে পড়েছে। পাড়াগুলোতে নীরব খাদ্যাভাব বিরাজ করছে। পরিস্থিতির কারণে সেখানে সরকারি সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর কাজও করা যাচ্ছে না। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় লোকজন আরও বেশি ভোগান্তি ও সংকটে পড়েছে।

রোয়াংছড়ি-রুমা সড়ক থেকে ছয় কিলোমিটারের পাইংখিয়ং-রৌনিনপাড়া সড়কটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড (পাচউবো) নির্মাণ করছে। পাচউবোর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াসির আরাফাত বলেছেন, কেএনএফের তৎপরতার কারণে প্রায় এক বছর ধরে সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষ হওয়া অংশেও সড়কটি কেটে ফেলার কথা তিনি শুনেছেন। কিন্তু নিরাপত্তার সমস্যায় সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।
রাস্তা কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোরশেদ আলম চৌধুরী আজ মঙ্গলবার বলেছেন, সড়ক কেটে গর্ত করা অংশগুলো দ্রুত মেরামত করাও যাচ্ছে না। কেএনএফ নিশ্চয়ই নিরাপত্তা বাহিনীর চলাচলের প্রতিবন্ধকতা অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজ করেছে। এ জন্য গর্ত খনন করা স্থানে ও আশপাশে কোথাও ইমপ্রোভাইস অ্যাক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) পুঁতে রাখতে পারে। শনাক্তকরণ যন্ত্রে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মেরামতের কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি নিরাপত্তা বাহিনীকে জানানো হয়েছে।

রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় নতুন সংগঠন কেএনএফ গত বছরের মাঝামাঝিতে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। তাদের দাবি, তারা সংখ্যায় কম—বম, ম্রো, খুমি, খেয়াং, পাংখুয়া ও লুসাই—ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের গোপন আস্তানায় সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

গত শুক্রবার ঢাকায় গ্রেপ্তার শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামীম মাহফুজও কেএনএফের আস্তানায় জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে পাহাড়ে শারক্বীয়া ও কেএনএফের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে।

আরও পড়ুন