রাজশাহী নগরবাসী যখন দুর্ভোগে, অনুমতি ছাড়াই তখন বিদেশভ্রমণে ২৬ কাউন্সিলর
টানা বর্ষণে রাজশাহী নগরের বাসিন্দাদের যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, তখন জানা গেল, সিটি করপোরেশনটির ৪০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২৬ জন একসঙ্গে ভারত ভ্রমণে গেছেন। নিয়মে থাকলেও এই ভ্রমণের জন্য কাউন্সিলরা সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুমতি নেননি। দুর্যোগে জনপ্রতিনিধিদের পাশে না পেয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন নগরীর বাসিন্দারা।
নির্বাচিত নতুন মেয়র দায়িত্ব নেননি বলে সিটি করপোরেশনের সার্বিক কার্যক্রমের দায়িত্বে আছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ বি এম শরিফ উদ্দিন। তিনিও জানেন না এ সফরের বিষয়ে। কেন জানেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে জানালে তো তিনি জানবেন। তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী মেয়র ও কাউন্সিলররা এখনো দায়িত্ব নেননি। ১১ অক্টোবর তাঁদের মেয়াদ শেষ হবে। ভারত ভ্রমণে যাওয়া ২৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ৭ জন সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যান। সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী, অনুমোদন ছাড়া তাঁরা কোনোভাবেই ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক বিদেশ সফরে যেতে পারেন না।
প্রবল বৃষ্টির কারণে রাজশাহী নগরের কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এখনো চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছেন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেরখাদিয়া কলেজপাড়া মহল্লার পানি ড্রেনে নামার কোনো ব্যবস্থা নেই। গতকাল শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, একদল লোক শাবল-হাতুড়ি নিয়ে ড্রেন ফুটো করে এলাকার পানি বের করার চেষ্টা করছেন। ভুক্তভোগী বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন ধরে তাঁরা এই অবস্থার মধ্যে আছেন। গত শুক্রবার এ জন্য জুমার নামাজ পড়তে পারেননি। তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ। বাধ্য হয়ে দূষিত পানিতে চলাচলের কারণে তাঁদের হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থার মধ্যেও তাঁরা কাউন্সিলরের দেখা পাননি। কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ সরিফুল ইসলাম, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ রজব আলী, প্যানেল মেয়র-৩ ও সংরক্ষিত আসন-১-এর কাউন্সিলর তাহেরা খাতুন, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. কামরুজ্জামান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাসেল জামান, ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্বাস আলী সরদার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মমিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সোবহান, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান, সংরক্ষিত নারী আসন-২-এর কাউন্সিলর আয়েশা খাতুন, সংরক্ষিত আসন-৩-এর কাউন্সিলর মুসলিমা বেগমসহ মোট ২৬ জন জনপ্রতিনিধি ভারতে যান।
আজ রোববার সকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কাশ্মীর সফর শেষে আজ ভোর চারটায় কলকাতা এসে পৌঁছেছেন। কাশ্মীরে প্রকৃতি ছাড়া কিছুই দেখতে পাননি। সবকিছুই বরফে ঢাকা। তাঁদের দলের কয়েকজন আজই দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি ছাড়াই যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে তাঁদের দলে সাতজন কাউন্সিলর আছেন, যাঁরা এবার নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারেননি। সব মিলিয়ে তাঁরা ২৬ জন গিয়েছেন। ১২ অক্টোবর মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এ জন্য এ সময়ে তাঁরা ঘুরতে গিয়েছেন। কাউন্সিলরদের ভ্রমণের বিধান আছে, তবে অনুমতির বিষয়টি তিনি বলতে পারছেন না। তাঁরা একটা আবেদন জমা দিয়ে এসেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
কাউন্সিলরদের বিদেশভ্রমণের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিটি করপোরেশন-২ শাখার উপসচিব মাহবুবা আইরিন প্রথম আলোকে বলেন, অনুমতি ছাড়া কোনো জনপ্রতিনিধি বিদেশভ্রমণ করতে পারেন না। নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশভ্রমণ করতে হলে তাঁরা সিটি করপোরেশনে আবেদন করবেন। আবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর সব প্রক্রিয়া মেনে মন্ত্রণালয় তাঁদের অনুমোদন দেবে।
এই উপসচিব আরও বলেন, তাঁরা রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে এ ধরনের কোনো বিদেশভ্রমণের আবেদন পাননি। কোনো কাউন্সিলরকে বিদেশভ্রমণের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। এই অনিয়ম করলে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই নিয়ম ভঙ্গ করে বিদেশ সফর করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।