প্রার্থীকে চেনেন না পোলিং এজেন্ট

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। আজ দুপুরে প্রথম আলোছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই ভোটকেন্দ্রের একটি বুথে পাশাপাশি বসে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন নূর বেগম ও নূর জাহান।

তাঁদের মধ্যে নূর বেগম ঈগল প্রতীকের (আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের প্রতীক) এবং নূর জাহান মিনার প্রতীকের পোলিং এজেন্ট।

মিনার প্রতীকের এজেন্ট নূর জাহানের কাছে প্রার্থীর নাম জানতে চাইলে, বলতে পারেননি। একপর্যায়ে বলেন, সেলিম নামের এক ব্যক্তি তাঁকে মিনার প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ জন্য এক হাজার টাকা দেন, সঙ্গে দুপুরের খাবার। কিন্তু প্রার্থীর পরিচয় তিনি জানেন না।

এ সময় তাঁর পাশে বসা ঈগল প্রতীকের পোলিং এজেন্ট নূর বেগম বলেন, তাঁকেও পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন সেলিম। এ জন্য এক হাজার টাকা দেন। অবশ্য নূর বেগম ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর নাম বলতে পারেন। তাঁর কাছে ঈগল প্রতীকের ব্যাচ ছিল। যদিও মিনার প্রতীকের এজেন্ট নূর জাহানের কাছে ব্যাচ ছিল না।

নূর জাহানের মতো এই কেন্দ্রের আরও দুটি নারী বুথে থাকা মিনার প্রতীকের পোলিং এজেন্ট রাইজা খাতুন ও দিলু আরা বেগমও প্রার্থীর নাম বলতে পারেননি। তাঁরা জানান, সেলিম নামের একজন তাঁদের পোলিং এজেন্ট হিসেবে ভোটকেন্দ্রে এনেছেন। এ জন্য এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন, সঙ্গে দুপুরের খাবার। এই দুটি বুথে থাকা ঈগল প্রতীকের দুই নারী পোলিং এজেন্টও জানান, এক হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁদের দায়িত্ব দিয়েছেন সেলিম।

এই আসনে ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের একজন ইসলামী ঐক্যজোটের মিনার প্রতীকের প্রার্থী শফকত হোসাইন চাটগামী।

কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিলেন আবু তালেব ওরফে সেলিম। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ঈগল প্রতীকের কেন্দ্র সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন। শুধু ঈগল প্রতীকের পোলিং এজেন্ট দিয়েছেন। মিনার প্রতীকের পোলিং এজেন্ট নিয়োগের বিষয়ে জানেন না। তাঁরা কোন কক্ষে বসবেন, এটা চেনেন না হয়তো। এ জন্য এই ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়েছে।

এদিকে একই কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ঈগল প্রতীক আর মিনার প্রতীকের পোলিং এজেন্ট আলাদা আলাদা হলেও তাঁরা সবাই আসলে একজনের পক্ষে কাজ করছেন, তা হচ্ছে ঈগলের পক্ষে। আর তাঁরাও (নৌকা প্রতীক) ডাব প্রতীকের এজেন্টদের নিয়োগ দিয়েছেন।

এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় এই ভোটকেন্দ্রের ১ নম্বর বুথের ডাবের এজেন্ট জাগেরা বেগমের কথায়। তিনি প্রার্থীর নাম ও প্রতীক কিছুই বলতে পারেননি। তিনি আবদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এদিকে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ঐক্যজোটের শফকত হোসাইন চাটগামী (মিনার) প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি প্রায় সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিয়েছেন। ঈগলের প্রার্থী কেন তাঁর এজেন্ট দেবেন? আর তাঁর নামটি একটু জটিল। এ জন্য হয়তো বলতে পারেননি।

জালিয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১০ প্রার্থী থাকলেও মাত্র ৩ প্রার্থী সবগুলো বুথে পোলিং এজেন্ট দিয়েছেন। আর কয়েকজন প্রার্থী এক-দুজন করে এজেন্ট দিয়েছেন।

এই আসনের প্রার্থীরা হচ্ছেন নৌকা প্রতীকের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমান ও ট্রাক প্রতীকের আব্দুল্লাহ কবির। বাকি সাতজন হলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আব্দুল মালেক (চেয়ার), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) আশীষ কুমার শীল (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ কংগ্রেসের এম জিল্লুল করিম শরীফ (ডাব), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মামুন আবছার চৌধুরী (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের শফকত হোসাইন চাটগামী (মিনার) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান (বেঞ্চ)।

১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এই আসন। ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন। স্বাধীনতা-পরবর্তী ১১টি নির্বাচনে এই আসনে চারবার (২০১৪, ২০১৮সহ) আওয়ামী লীগ, পাঁচবার বিএনপি ও দুবার জাতীয় পার্টি জয়ী হয়।