বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে ‘খারাপ’ আচরণ, ২১ ঘণ্টা পর মুক্তি পেলেন সেই কলেজছাত্র
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করার অভিযোগে ২১ ঘণ্টা হাজতে থাকার পর আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়েছেন কলেজছাত্র হাসান আলী। আজ রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালি আমলি আদালতের বিচারক শোয়েবুর রহমান এ আদেশ দেন।
১৫ ঘণ্টা থানাহাজতে আটক রাখার পর আজ বেলা একটার দিকে তাঁকে ‘অধর্তব্য’ অপরাধের মামলায় আদালতে পাঠায় পুলিশ। এরপর আদালতের হাজতখানায় আরও ছয় ঘণ্টা থাকার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
হাসান আলী রংপুর মডেল কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে তাঁকে নগরের শাপলা মোড়ের ভাড়া বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ‘খারাপ আচরণ’ করেছেন।
মুক্তির পর আদালতের হাজতখানার সামনে হাসান আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা তাঁর বাসায় গিয়ে বাজে ব্যবহার করছিলেন। তখন তাঁদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। পুলিশ কথা বলার কথা বলে তাঁকে থানায় নিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘আমাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন ছেড়ে দেওয়া হলো না জানি না। আমাকে হাজতে থাকতে হলো। এটা আমার কপালে ছিল। আর কিছু বলতে চাই না।’
কলেজছাত্রের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরের শাপলা মোড়ে কয়েক দিন আগে রফিক আহমেদ নামের একজন শিক্ষক ফেসবুকের একটি ভিডিওতে ‘স্পোকেন ইংলিশ’ শেখাতে ‘শহীদ আবু সাঈদ কোচিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেন। রফিক আহমেদের ফেসবুক পেজটি আটক কলেজছাত্র হাসান আলী খুলে দেন বলে অভিযোগ। এরপর গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে শাপলা চত্বর এলাকায় হাসানের ভাড়া বাসায় যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের একদল নেতা-কর্মী। তাঁর সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
গতকাল রাত ১১টার দিকে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানাহাজতে কলেজছাত্র হাসান আলী। বাইরে তাঁর স্ত্রী শারমিন খাতুন দাঁড়িয়ে আছেন। শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক রফিক আহমেদের কাছে তাঁর স্বামী ইংরেজি শিখতেন। তিনি (রফিক) একটি কোচিং সেন্টার খুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বামীর কাছ থেকে তিনি কোচিং সেন্টারের ফেসবুক পেজ খুলে নেন। ওই ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও বানান।
শহীদ আবু সাঈদের নামে কোচিং সেন্টার খোলার ঘটনায় গতকাল রাত একটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মারুফ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, নগরের মীরগঞ্জের বাসিন্দা রফিক আহমেদ শহীদ আবু সাঈদের নামে কোচিং সেন্টার খুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। আবু সাঈদের নামে কোচিং সেন্টার খুলে তাঁকে ব্যঙ্গত্মকভাবে প্রচার করা হয়েছে। এতে আবু সাঈদের পরিবারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
তবে জিডিতে কলেজছাত্র হাসান আলীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি আবদুল্লাহ আল মারুফ। এ ব্যাপারে কথা বলতে আবদুল্লাহ আল মারুফের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা কমিটির সদস্যসচিব আশফাক আহমদ বিকেল পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে কেউ ব্যবসা করুক, তা তাঁরা চান না। কিন্তু থানাহাজতে কলেজছাত্রের আটকে রাখার ঘটনাটি অনভিপ্রেত। ওই ঘটনায় তাঁদের কমিটির শীর্ষস্থানীয় কেউ ছিলেন না। ওখানে কে কে ছিল তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান দাবি করেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁকে থানায় এনে হাজতে রাখা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা রাত একটা পর্যন্ত থানায় ছিলেন। তাঁরা হাসান আলীর বিরুদ্ধে জিডিতে অভিযোগ না করলেও মৌখিকভাবে ‘খারাপ আচরণ’ করার অভিযোগ করেছেন।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া একজন নাগরিককে বাসা থেকে তুলে হাজতে আটক রাখায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের আরও পেশাদারির পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল। একজন নাগরিককে এভাবে বাসা থেকে গিয়ে তুলে আনা, তাঁর ও তাঁর পরিবারের সম্মানহানি করার দায়ভার কে নেবে?