থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সিলেটের তাপমাত্রায় শীতের ছোঁয়া

বৃষ্টিতে ভিজে চলেছেন রিকশাচালক। সোমবার সকালে সিলেট নগরের বারুতখানা এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

চলতি মৌসুমে সারা দেশে তাপপ্রবাহ বইলেও সিলেটে তীব্র গরম পড়েনি। তবে লোকজনকে ফ্যান চালাতে হয়েছে। তবে দুই দিন ধরে বদলে গেছে চিত্র। বৈশাখ মাস চললেও অনুভূত হচ্ছে শীত। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ সিলেটে—১৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট আজ দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ছিল ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে গতকাল রোববার রাতে সিলেটের বাসিন্দারা বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ করে ঘুমিয়েছেন। গায়ে জড়িয়ে নিতে হয়েছে কাঁথা।

গতকাল দুপুরের পর থেকেই মেঘে ঢাকা আকাশে সূর্যের তাপ তেমন পাওয়া যাচ্ছিল না। বিকেলের পর থেকে বাইরে বইতে শুরু করে শীতল হাওয়া। আজ সকাল থেকে সিলেটে সূর্যের দেখাই পাওয়া যায়নি। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে শীতল একটা আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছে।

আরও পড়ুন

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ সিলেটে চলতি বৈশাখ মাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে সিলেটে ২৭ এপ্রিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন দিন ধরে সিলেটের তাপমাত্রা ক্রমে কমছে। ৩ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৪ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ ছাড়া বৈশাখ মাসজুড়েই সিলেটে হয়েছে কদিন পরপর বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা বাড়েনি। গত ২২ এপ্রিল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সিলেটে সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল ৫৬ মিলিমিটার। তবে আজ সকাল ৬টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ৫৪ মিলিমিটার। ২৪ ঘণ্টায় আরও কয়েক দফা বৃষ্টি হলে চলতি বৈশাখ মাসে দিনের বেলা সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন
রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। বৃষ্টির কারণে বৈশাখেও শীত অনুভূত হচ্ছে। সোমবার সকালে সিলেট নগরের বারুতখানা এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চললেও সিলেটের বাসিন্দারা কিছুটা হলেও ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে ছিল। এর মধ্যে আজ চলতি বৈশাখ মাসের সর্বোচ্চ ঠান্ডা আবহাওয়া অনুভব করছে তারা। অনেকে এ আবহাওয়াকে শীতকালের মতো বলছেন।

নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা ফয়সল মোহাম্মদ হোসেন বলেন, তাঁদের ঘরে ছয়টি কক্ষের চারটিতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রয়েছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক পাখাও আছে। গত এক মাসে যন্ত্রগুলো প্রতিদিনই চলেছে। পাখাগুলো বিদ্যুৎ না থাকলে আইপিএসের সাহায্যে চালানো হতো। কিন্তু এক মাসের মধ্যে গত রোববার রাতেই কেবল ব্যতিক্রম হয়েছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চালু করতে হয়নি, পাশাপাশি বৈদ্যুতিক পাখাও চালু করতে হয়নি।

আরও পড়ুন

নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা রতন মল্লিক বলেন, তাঁর ঘরে আট মাস বয়সী ছেলে। একটু গরম হলেই সে কান্নাকাটি করে। লোডশেডিং হলে ছেলের যাতে গরম না লাগে, সে জন্য রিচার্জেবল ফ্যান কিনেছিলেন। কিন্তু রোববার রাতে সেই ফ্যান চালাতে হয়নি, উল্টো পাতলা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়েছেন তাঁরা।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, এখন কালবৈশাখীর মৌসুম। এটি স্বাভাবিক আবহাওয়া। শীতকালের ঠান্ডার সঙ্গে বৈশাখ মাসের ঠান্ডার মিল নেই। বৈশাখ মাসে কেবল বৃষ্টি হলেই ঠান্ডা অনুভূত হয়, তবে শীতকালে বৃষ্টি ছাড়াও ঠান্ডা থাকে। তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে সারা দেশে তাপপ্রবাহ বইলেও সিলেটে তীব্র গরম পড়েনি।