‘মনে কয় কাজ ফেলে গাছের ছায়ায় গিয়ে বসে পড়ি’

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বইছে। এতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে নগরের কাজলা এলাকায়ছবি: শফিকুল ইসলাম

রাজশাহীতে টানা মাঝারি তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। তীব্র গরমে অনেকেই বাইরে কম বের হচ্ছেন। যাঁরা বের হচ্ছেন, তাঁরা অনেকেই ছাতা নিয়ে বের হয়েছেন। রিকশাচালক থেকে শুরু করে শ্রমজীবীরা সবাই দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে মাথায় গামছা, ক্যাপ পরেছেন। প্রচণ্ড গরমে অনেককেই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। এই গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। তাঁদের দাবদাহ মাথায় নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।

রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। বেলা তিনটার দিকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস। এর আগে ১ এপ্রিল থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হচ্ছিল।

নগরের কাজলা এলাকায় দুপুরে রাস্তা সংস্কারে কাজ করছিলেন এক দল শ্রমিক। তাঁদের কেউ বালু, কেউবা ইট-সুরকি বহন করছিলেন। কেউ ডালা ভরে দিচ্ছিলেন। একটু অবসর পেলেই তীব্র গরমে কেউ কেউ গামছা দিয়ে মুখমণ্ডল মুছছিলেন, কেউ কেউ বোতলে আনা পানি পান করছিলেন। শ্রমিকদের একজন দয়াল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ কিলোমিটার দূরে তানোরের কাঁকনহাট থেকে সকালে কাজে এসেছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে তাঁরা ৩৮০ টাকা করে পান। গাড়ি ভাড়াতেই চলে যায় ৬০ টাকা। তবু পেটের দায়ে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, ‘কয় দিন থেকে এত গরম পড়েছে। শরীর পুড়ে যায় যায় অবস্থা। বারবার খালি মনে কয় কাজ ফেলে গাছের ছায়ায় গিয়ে বসে পড়ি। কিন্তু কাজ তো ফেলা যায় না।’

আরও পড়ুন

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা যদি ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয় যখন তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর অতি তীব্র হয় ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে। সে হিসেবে রাজশাহীতে আজ মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। এর আগের তিন দিনও একই ধরনের তাপপ্রবাহ চলেছে।

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বইছে। এ সময়ের করণীয় নিয়ে মাইকিং করছে রেড ক্রিসেন্ট। নগরের মির্জাপুর এলাকায় দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ দিবাগত রাতে রাজশাহীতে ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তখন তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রিতে নেমে আসে। এরপর থেকে পরে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে গত গতকাল বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা টানা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার এক দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক এ এস এম গাউসুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। এটি মাঝারি তাপপ্রবাহ। আজ বেড়ে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে। বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাঁকা ক্যাম্পাসে রিকশাচালক শাহেদ আলী গাছের নিচে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, ক্যাম্পাস ছুটি হয়ে গেছে। ভাড়া নেই তেমন। দুপুরবেলায় একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে গাছের নিচে এসেছেন। একটু বিকেল হলে রিকশা নিয়ে শহরে চলে যাবেন। দুপুরে রোদে রিকশা চালালে মাথা ঝিম ঝিম করে।

নগরের বিনোদপুর এলাকায় তরমুজ বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বললেন, রোদের কারণে তরমুজের দাম বেড়ে গেছে। কয় দিন আগে ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে নেমে গেছিল। এখন বিক্রি করছেন ৪০ টাকায়। কয় দিন পর আরও বাড়তে পারে।

এদিকে তীব্র গরম থেকে রক্ষার উপায় জানাতে রাজশাহী নগরে মাইকিং করছে রেড ক্রিসেন্ট। তীব্র গরমে বাইরে কম বের হওয়াসহ খাওয়াদাওয়ার বিষয়েও সতর্ক করা হচ্ছে। নগরের বিনোদপুর এলাকায় একটি অটোরিকশার তিন পাশে সচেতনতামূলক ব্যানার ঝুলিয়ে এই প্রচার চালায় তারা। অটোরিকশাচালক জানান, নগরের আটটি জায়গায় এই কার্যক্রম চলছে আজ থেকে।