মেডিকেলে পড়ার খরচের চিন্তায় মলিন এমরানের খুশি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় এমরান হোসেনের অবস্থান ৪৭৯
ছবি: প্রথম আলো

প্রত্যন্ত গ্রামে ভিটের জমিও নেই এমরান হোসেনের পরিবারের। আড়াই শতক জমিতে যে ঘর, সেটিও বিক্রি করে দেওয়া অভাবের কারণে। আর কোনো আবাদি জমিও নেই। এমরানের বাবা ভ্যানচালক। আর্থিক টানাপোড়েনে অনেক সময় মাকেও কাজ করতে হয়। এমন এক পারিবারের ছেলে এমরান হোসেন এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই সাফল্যে পরিবারের সবাই বেশ খুশি। তবে পড়াশোনার পরবর্তী খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে নিমিষেই সব খুশি মলিন হয়ে যাচ্ছে।

এমরান হোসেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার ভ্যানচালক মো. ইউসুফের ছেলে। এ বছর অনুষ্ঠিত এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় এমরান হোসেনের অবস্থান ৪৭৯। তালিকা অনুযায়ী, এমরান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছেন।

এমরান হাজিরহাট মিল্লাত একাডেমি থেকে এসএসসি ও লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁর ছোট দুই বোন আছে। একজন স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে আরেকজন পড়ছে পঞ্চম শ্রেণিতে। এসএসসি পাসের পর বড় বোনের বিয়ে হয়েছে।

এমরান হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম করে মা–বাবা আমাকে এত দূরে এনেছেন। কখন আমি প্রাইভেট পড়িনি। তবে নিজের ও পড়াশোনার খরচের জন্য এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়েছি। জীবনে কখন ঢাকা যাওয়ার সুযোগ হয়নি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য গত ১০ মার্চ প্রথম ঢাকা গিয়েছি। প্রতিদিন অভাব-অনটনের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে এ পর্যায়ে এসেছি।’

এমরানের বাবা মো. ইউসুফ বলেন, ভ্যান চালিয়েই সংসার চলে। দৈনিক আয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে অভাব–অনটনের মধ্যে সংসার চলছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে সব সময় তাঁকে হিমশিম খেতে হয়েছে। ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর জন্য তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে সমাজের বিত্তবান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে তাঁর ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। এখন তো কিছু টাকা দরকার। এত টাকা কোথায় পাবেন, এই চিন্তাই এখন বেশি।

এমরানের মা মারজান খাতুন জানান, ছেলের পেছনে তেমন খরচ করতে পারেননি। এত কষ্টের মধ্যেও সে এত দূর এগিয়ে গেছে, এ জন্য তাঁরা খুশি। এখন দুশ্চিন্তায় বর্তমানের খরচ নিয়ে।

হাজিরহাট সরকারি মিল্লাত একাডেমির সাবেক প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, এমরান খুব মেধাবী একটি ছেলে। ওর বাবা অনেক কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগান। এ রকম প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অভাব-অনটনের মধ্যেও এমরান মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় গ্রামের সবাই খুশি।