যুবদল নেতা তৌহিদুলকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে: কুমিল্লায় সুলতান সালাউদ্দিন
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে মারা যাওয়া যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ইটাল্লা গ্রামে তৌহিদুল ইসলামের ‘বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ ও দোয়া’ মাহফিলে এই মন্তব্য করেন তিনি।
তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না, উল্লেখ করে কর্মসূচিতে সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতেই পারে। আবার অভিযোগ মিথ্যাও হতে পারে। অভিযোগ এলেই সেটা জাজমেন্টে নেবে না তারা? এটা তো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নাকি ৫ আগস্টের আগে যেভাবে মানুষকে হত্যা ও গুম করা হয়েছে, সেভাবেই হত্যা করবে? আমি বলতে চাই যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের দায়িত্ব বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়েছেন জানিয়ে সুলতান সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘তৌহিদুলে পরিবারের সবাই ইসলামি মনোভাবাপন্ন। তার দুই মেয়ে পবিত্র কোরআনের হাফেজ। এ ধরনের পরিবারের কেউ কখনো কোনো অন্যায় কাজ করতে পারে না। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এদের কোনো মানবিকতা নেই। যারা সিভিল পোশাকে থেকে সেনাবাহিনীকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা। সেনাবাহিনী তাদের পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি যারা সিভিল পোশাকে ছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, এ ঘটনার সর্বোচ্চ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা তদারকি করব। এ ছাড়া তিনি এই পরিবারের সব দায়দায়িত্ব বহন করবেন। এটি তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’
সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘তৌহিদুল ইসলামের হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের আইনে সর্বোচ্চ বিচার হোক, এটা আমরা প্রত্যাশা করি। সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণে একটি বিচার করছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেনাবাহিনীও পদক্ষেপ নিচ্ছে। আইএসপিআর তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এই বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এদের প্রত্যেকের বিচার করতে হবে।’
স্থানীয় ইটাল্লা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে ওই মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদল। এ সময় তৌহিদুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে কবর জিয়ারত, মিলাদ ও দোয়ায় অংশ নেন সুলতান সালাউদ্দিনসহ বিএনপি ও যুবদল নেতারা। পরে তাঁরা তৌহিদুলের বাসায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী–সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
দোয়া অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের পাশে থেকে পুরো বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁদের পাঠিয়েছেন। তাঁরা পুরো ঘটনাটা প্রথম থেকেই পর্যবেক্ষণ করছেন। দোষীদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি প্রশাসনের কাছে তাঁরা জানিয়েছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে চান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশিদ (ইয়াছিন), কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী, সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ, দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক, সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
মঙ্গলবার মামলা হতে পারে
এদিকে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভগ্নিপতি সোহেল মহিউদ্দিন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করা হতে পারে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
নির্যাতনে মারা যাওয়া তৌহিদুল ইসলাম (৪০) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে বাড়ি থেকে যৌথ বাহিনী তৌহিদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে থানা–পুলিশকে বলা হয় তৌহিদুল ইসলামকে নেওয়ার জন্য। যখন পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে হস্তান্তর করা হয়, তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।