রাকসু নির্বাচনে বিজিত প্রার্থীদের ‘হারু পার্টি’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে বিজিত প্রার্থীদের একাংশের উদ্যোগে ‘হারু পার্টির’ (বনভোজন) আয়োজন করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ মাঠে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে ছাত্রদল, বাম জোট-সমর্থিত প্যানেলসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নেন।
আয়োজকেরা জানান, চারটি লক্ষ্য নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেগুলো হলো—রাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা; প্রতিনিধিদের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করা; রাকসু যেন কোনো দল-মতের উদ্দেশ্য সরবরাহ না করে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা এবং সর্বোপরি দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে নিজেদের সক্রিয় অবস্থান ধরে রাখা।
আয়োজনের শুরুতে ছিল পরিচয় পর্ব। পরে অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তব্য দেন অনেকে। রাত পৌনে ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় সেখানে খেলাধুলা, সেলফি তোলা চলছিল। এ সময় অনেকে ‘হারু পার্টি, সবাই মিলে হারু পার্টি’, ‘তুমি কে আমি কে, রাবিয়ান, রাবিয়ান’ স্লোগান দেন। অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজনসহ আরও কিছু পর্ব আছে বলে জানান আয়োজকেরা। এতে নবনির্বাচিত জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারকে অংশ নিতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে কথা বলতে তাঁকে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ছাত্রদল-সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন বলেন, ‘আমরা পরাজিত হলেও এখনো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার। আমাদের একটি উদ্দেশ্য যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন, তাঁরা যেন তাঁদের ইশতেহারগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেন। সে জন্য তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা ও তদারকি করার দায়িত্ব আমরা যাঁরা হেরেছি তাঁদের সবার।’
নবনির্বাচিত ভিপি মোস্তাকুর রহমানের (জাহিদ) উদ্দেশে ছাত্রদলের এই প্রার্থী বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় বড় ভাই জাহিদ বলেছিলেন, আমরা যেই বিজয়ী হই, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। তিনি যেন তাঁর কথা রাখেন, তাঁর কাছে এই আহ্বান রইল। তাঁরা যদি তাঁদের ইশতেহার ও প্রতিশ্রুতি থেকে একবিন্দু বিচ্যুত হন, আমরা সবাই একসঙ্গে তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিত করব।’
স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী শাহ পরাণ (লিখন) বলেন, ‘আমরা যাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, তাঁদের সবারই ক্যাম্পাস নিয়ে স্বপ্ন ছিল। আমরা যে হেরে যাওয়ার কারণে হারিয়ে যাইনি, সেই স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হইনি, তা জানান দিতেই আজকের এই আয়োজন। বিজয়ীরা ভবিষ্যতে ক্যাম্পাসে তাঁদের চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নে আমাদের সহযোগিতা পাবে। তবে তাঁরা বিপথে গেলে যে একচুলও ছাড় পাবে না, তা-ও আমরা জানিয়ে দিচ্ছি এই আয়োজন থেকে।’
বিজিতদের নিয়ে কাজ করার বিষয়ে জানতে নবনির্বাচিত ভিপি মোস্তাকুর রহমানের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে রাকসুর আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী কাজ করব। বিজিতদের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়েই এই ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে চাই।’
৩৫ বছর পর গত বৃহস্পতিবার রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সব মিলিয়ে ৯০২ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছিলেন। নির্বাচনে রাকসুর ২৩টি পদের মধ্যে ভিপি, এজিএসসহ ২০টি পদেই জয়ী হন ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা।
বাকি তিন পদের মধ্যে জিএস পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাহউদ্দিন আম্মার, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের মোছা. নার্গিস খাতুন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া ১৭টি হল সংসদের ভিপি, জিএস ও এজিএস পদেও জিতেছেন ছাত্রশিবিরের প্রার্থীরা। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদের মধ্যে তিনটিতে তাঁরাই জয়ী হয়েছেন।