‘ব্যাটা, ব্যাটার বউ আর নাতি বাড়িত ফিরল লাশ হয়্যা, ক্যামনে বাঁচমু’
‘বছর ঘুরে আসল ব্যাটা হামার ছলপোল লিয়ে বাড়িত আসে না। ফোন করে ব্যাটাক কচনু তোর বাপ অসুস্থ। এ্যানা বাডিত আয়, বাপটাক দেখে যা। সেই কথা শুনে কালক্যা বিয়ানবেলা ব্যাটা হামার ছলপোল লিয়ে বাড়িত আসপার জন্যি বের হচলো। কিন্তু হামার ব্যাটা বাপক দেকপার পারল না। মুই মাও হয়্যাও ব্যাটার মুখ দেকপার পারনু না। ব্যাটা, ব্যাটার বউ আর নাতি বাড়িত ফিরল লাশ হয়্যা, ব্যাটাক ছাড়া হামি?’
শোকে কাতর হয়ে কথাগুলো বলছিলেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার ঈশ্বরঘাট গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম (৬৫)। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কাভার্ড ভ্যান ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন তাঁর ছেলে জাহিদুর রহমান (৩২), পুত্রবধূ নাসরিন আক্তার (২৮) ও নাতি হুরাইরা (৮)। গতকাল শুক্রবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়চালা এলাকায় মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
জাহিদুর রহমান আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে স্ত্রী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে অটোরিকশাতে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই জাহিদুর ও ছেলে হুরাইরা মারা যান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান নাসরিনও।
নিহত জাহিদুর ছিলেন ঈশ্বরঘাট গ্রামের ছাবেদ আলী প্রামাণিকের (৭০) চতুর্থ ছেলে। তাঁর বড় তিন ভাই ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। প্রায় ১২ বছর আগে আশুলিয়ায় চাকরি শুরু করেন জাহিদুর। সেখানেই পরিচয় ও পরে বিয়ে হয় সহকর্মী নাসরিন আক্তারের সঙ্গে। তাঁদের সংসারে একমাত্র সন্তান হুরাইরা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। উপার্জনের টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটি আধাপাকা বাড়ি বানিয়েছিলেন জাহিদুর। ভবিষ্যতে গ্রামেই কিছু একটা করার স্বপ্ন ছিল তাঁর।
ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিকে বাড়ির পাশের কবরস্থানে এক সঙ্গে দাফনের পর অনেকটা নির্বাক ছাবেদ আলী প্রামাণিক। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কালক্যা বিয়ানবেলা ব্যাটার সাথে শ্যাষ কথা হচলো। ছল হামার ফোন কাইরা কইল—বাবা, হামি বাড়িত আসিচ্চি। তোমার ব্যাটার বউ, লাতিও আসচ্চি। মা কইল তুমি নাকি অসুস্থ। বাড়িত আসে শনিবার তোমাক ডাক্তার দেকামু। হামাক ডাকতার দেকাপার কতা দিয়্যা ছল বাড়িত ফিরল লাশ হয়্যা। সাথে বউমা আর লাতিনতার লাশও বাড়িত আসল। পরিবারের সগলি চলে গেল। তার লতুন বাড়িত এখন কে থাকপি?’