মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েও দুশ্চিন্তায় চুয়াডাঙ্গার আফরোজা
আফরোজা সুলতানা এ বছর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এই সাফল্য আফরোজা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আনন্দ এনে দিলেও তাঁদের কপালে রয়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে এখন তাঁদের হিমশিম অবস্থা। অর্থের অভাবে মেধাবী এই তরুণীর স্বপ্ন পূরণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
আফরোজা সুলতানার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সার্কিট হাউসপাড়ায়। বাড়ি বলতে অন্যের জমিতে তৈরি টিনশেড। তাঁর বাবা আশরাফুল ইসলাম খোকন স্থানীয় একটি মেডিকেল সার্ভিস পয়েন্টে চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে দিন হাজিরায় কাজ করেন এবং মা সুলতানা ফারহানা গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আফরোজা ছোট। একমাত্র ভাই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান কাফি চাকরিপ্রত্যাশী।
গত রোববার দুপুরে আফরোজার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডের ঘরে আসবাব বলতে তেমন কিছু নেই। তাঁর পড়ার জন্য একটি টেবিল ও চেয়ার আছে। ঘরের মধ্যে কাঠের চৌকির একাংশজুড়ে বই। সেখানে আলাপকালে পরিবারের সদস্যরা শোনান টানাপোড়েনের মধ্যে আফরোজার সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা।
আফরোজার বাবা আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার নিজেরই ওষুধের দোকান ছিল। করোনার সময় লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে একজন চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করি। দিন হাজিরা হিসেবে যা পাই, তাতে সংসার চালাতেই হিমশিম অবস্থা। প্রতিদিনই বাড়ছে ঋণের বোঝা। মেয়েকে মেডিকেলে ভর্তি আর পড়ালেখার খরচ বহন করার সামর্থ্য আমার নেই। ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভর্তি করাতে হবে। এখনো ভর্তির টাকাই জোগাড় করতে পারিনি। বড্ড দুশ্চিন্তায় আছি।’
আফরোজা সুলতানার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি শিক্ষাজীবনের প্রতিটি ধাপে সাফল্য পেয়েছেন। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০২১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থানীয় বাসিন্দা ও ঘনিষ্ঠজনদের সহযোগিতা নিয়ে মেয়েকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ভর্তি করান বাবা আশরাফুল ইসলাম। সেখানেও জিপিএ-৫ পান আফরোজা। গত বছর প্রথমবার মেডিকেলে ভর্তির চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। সেবার অবশ্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে পড়ার সুযোগ হলেও ভর্তি হননি আফরোজা। এবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
আফরোজা বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। প্রথমবার মেডিকেলে ভর্তি হতে না পারলেও এবার সুযোগ পেয়েছি। আমার পড়াশোনার খরচ জোগাতে মা-বাবা অনেক কষ্ট করেছেন। তাদের কষ্ট ঘোচানোর পাশাপাশি আমি চাই একজন মানবিক ডাক্তার হতে। স্বপ্ন পূরণে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’