টেকনাফে দুই জেলে গুলিবিদ্ধের ঘটনায় বিজিবির প্রতিবাদ, মাছ ধরা বন্ধ

টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌপথের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ছোড়া গুলিতে কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে বাংলাদেশি দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গতকাল রোববার বিকেলে দেশটির রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ব্রাঞ্চ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বরাবর প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়। এটি পাঠিয়েছেন টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। এ ঘটনায় আতঙ্কে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই দেশের মধ্যে সীমান্তসংক্রান্ত যেকোনো ঘটনা বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে চিঠিপত্র আদান–প্রদান এবং পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা হয়ে আসছে। আজ সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত প্রতিবাদপত্রের জবাব দেয়নি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

বিজিবি ও স্থানীয় জেলে সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার শেষে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে ফেরার পথে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকায় (বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর মোহনা চ্যানেলে) গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। বদরমোকামের বিপরীতে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা। সেখান থেকে গুলি ছোড়া হয়। আগে থেকে সেখানে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ অবস্থান করছিল। গুলিতে বাংলাদেশি দুই জেলে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহ পরীর দ্বীপ হাজীপাড়ার মো. ফারুক (২৭) ও উত্তরপাড়ার মো. ইসমাইল (২০) আহত হন। গুলিবিদ্ধ ফারুককে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিতে তাঁর হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।

দুই জেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আজ সোমবার সকাল নয়টা পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গনি।

আরও পড়ুন

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে ফিশিং ট্রলারটির বিভিন্ন অংশ ছিদ্র (ফুটো) হয়েছে জানিয়ে মায়ের দোয়া ট্রলারের মালিক মো. ছিদ্দিক বলেন, গুলিবিদ্ধ ফারুককে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর আহত ইসমাইলকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। গুলির ঘটনা টেকনাফ থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছে।

বদরমোকাম চ্যানেলে বাংলাদেশি ফিশিং বোটে গুলির ঘটনায় টেকনাফের জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, কয়েক দিন আগে সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফের ফেরার পথে বদরমোকাম চ্যানেলের কাছে একটি যাত্রীবাহী ট্রলার আটক করেছিল বিজিপি। ট্রলারে ৩০-৩৫ জন বাংলাদেশি যাত্রী ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখার পর যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় ট্রলারে থাকা নারী-পুরুষ যাত্রীদের মধ্যে কান্নাকাটি শুরু হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট ট্রলার মালিক সমিতির একজন নেতা বলেন, নাফ নদীর বদরমোকাম চ্যানেলে ডুবোচরের সৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে ফিশিং ট্রলার ও যাত্রীবাহী ট্রলার চালাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিনা উসকানিতে গুলি ছোড়ার ঘটনায় টেকনাফের জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে আজ সোমবার প্রায় ৩০০ নৌকা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেনি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, বিজিপির গুলিতে বাংলাদেশি দুই জেলে আহত হওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।