শ্রীনগরে এসএসসি পরীক্ষার্থী নীরব হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

নিহত নীরব হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে এসএসসি পরীক্ষার্থী নীরব হোসেনকে হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিহতের স্বজন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বালাশুর শ্রীনগর-দোহার আন্তসড়কে নিউ অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে নীরব হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাঁও চৌধুরী বাড়ির সামনের সড়কে আরও একটি মানববন্ধন হয়। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান একুল খানের নেতৃত্বে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাওন খান, নিউ অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলের মালিক রফিকুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজুল ইসলামসহ কামারগাঁও কাজী ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয়, কামারগাঁও আইডিয়াল হাইস্কুল ও বালাশুর নিউ অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড হাইস্কুলের শিক্ষার্থীসহ সহস্রাধিক মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।

আরও পড়ুন

মানববন্ধন শেষে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মিছিলটি কামারগাঁও বাজার হয়ে শ্রীনগর-দোহার আন্তসড়ক প্রদক্ষিণ করে বালাশুর চৌরাস্তায় যায়। সেখানে সড়কে বসে যান বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। এতে প্রায় আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

নীরব হোসেন (১৭) চাঁদপুরের বাসিন্দা প্রয়াত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর শ্রীনগরের মধ্য কামারগাঁও এলাকায় নানাবাড়িতে থাকত। সে স্থানীয় কাজী ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। পরে লৌহজং মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় আবার তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

গত বৃহস্পতিবার কাজী ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিল মাগডাল গ্রামের আরেফিনসহ আরও কয়েকজন। বিষয়টি দেখে নীরব, কাজী ওহিদুলসহ (২০) তিনজন প্রতিবাদ করেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনার জেরে গত শুক্রবার বিকেলে ১০-১২ জন কিশোর হামলা চালিয়ে নীরবকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।

ঘটনার দিন থেকে ছেলে হারানোর শোকে কেঁদেই যাচ্ছেন নীরবের মা দিলারা বেগম। পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছেন না। ছেলের স্মৃতিচারণা করে কখনো বিলাপ করেন, কখনোবা নীরবে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন।
দিলারা বেগম বলেন, ‘নীরব আমার খুব সাধনার, বড় আদরের সন্তান ছিল। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ছেলেটাকে নির্মমভাবে মেরে ফেলল। এমন ঘটনা যেন কখনো কারও সঙ্গে না ঘটে। এমন করে যেন কখনো কারও মায়ের বুক খালি না হয়। প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই চাওয়া, ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি।’

শনিবার দুপুরে নীরবের মা দিলারা বেগম এ ঘটনায় শ্রীনগর থানায় ২৬ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৯ কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ১৪ বছর, একজনের বয়স ১৬ বছর ও পাঁচজনের বয়স ১৭ বছর।