প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি কারাগারে, দণ্ডিত শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার

অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছেছে। গত বুধবার ডাকযোগে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এ চিঠি আসে।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, জেল কোড অনুযায়ী এ ধরনের চিঠি পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হয়। কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটলে এ মাসের শেষ দিকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ওই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হতে পারে।

আরও পড়ুন

নাম না প্রকাশ করার শর্তে রাজশাহী কারাগারের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের পর থেকেই ওই আসামিদের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। পরে ওই চিঠি ডাকযোগে রাজশাহী কারাগারে আসে। সাধারণত চিঠি পাওয়ার ২১ দিন পর থেকে ২৮ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হয়। ফাঁসির দিনক্ষণ ঠিক হলে আসামিদের স্বজনদের ডাকা হবে। এ ছাড়া জেল কোড অনুযায়ী কারাগারে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন অধ্যাপক তাহেরের একসময়ের ছাত্র ও পরে সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে চূড়ান্তভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।

আরও পড়ুন

এর আগে ৩ মার্চ অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামিসহ দণ্ডিত তিনজনের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। তারও আগে শিক্ষক তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ৫ এপ্রিল রায় দেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পরে মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর এবং যাবজ্জীবন সাজা পুনর্বিবেচনা চেয়ে সালাম পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। চেম্বার আদালত হয়ে এই রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে ওঠে।

২০০৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরের ম্যানহোলে অধ্যাপক তাহেরের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় সেদিন তাঁর ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় মামলা করেন। মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় দুজনকে। বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আসামি আবদুস সালাম ও নাজমুল আলমকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডিত শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার

গত ২৩ মে অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলার আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলায় মহামান্য বিজ্ঞ আদালত আপনাকে (মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন) মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট উক্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৪২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদানের তারিখ অর্থাৎ ২২ মে ২০০৮ তারিখ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের পদ ও চাকরি থেকে আপনাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হলো।’

আরও পড়ুন

এত দিন পরে বহিষ্কারের বিষয়ে অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গ্রেপ্তারের পর থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত ছিলেন। এরপর এ মামলায় তিনি বিভিন্ন সময়ে আপিল করেছেন। সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় বিধি অনুযায়ী তিনি সুবিধা পেয়েছেন। তবে তাঁরা ২২ মে বরখাস্ত করলেও ২০০৮ সাল থেকে তিনি চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত। এ সময়ে নেওয়া সুযোগ-সুবিধা বিধি অনুযায়ী ফেরত দিতে হবে।