সৈকত থেকে খাবারের দোকান—সব জায়গায় ভিড়

সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসংখ্য পর্যটক। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় শুক্রবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কেউ সাগরের নোনাজলে গোসল করছেন। আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে সৈকতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ চটপটি-ফুচকা খেতে ভিড় করছেন ছোট ছোট দোকানে। পড়ন্ত বেলায় বিলাসী পর্যটকেরা আয়েশ করে সৈকতের কিটকটের নিচে বসে সমুদ্র দেখছিলেন। তরুণদের বালিয়াড়িতে ফুটবল খেলায় মেতে থাকার দৃশ্য, রংবেরঙের ঘুড়ি ওড়ানো ছিল মনোমুগ্ধকর। ভোজনরসিকদের ভিড় ছিল মাছের বারবিকিউর দোকানগুলোতে।

ঈদের ছুটিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের চিত্র ছিল এ রকম। ঈদের ছুটিতে চিরচেনা এ রূপ দেখে খুশি ব্যবসায়ীরাও। গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের দিন দূরদূরান্তের পর্যটক-দর্শনার্থীদের তুলনায় পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের উপস্থিতি বেশি ছিল। এসব মানুষের বেশির ভাগই ছিলেন বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা জেলার। অধিকাংশই সন্ধ্যার পর ফিরে গেছেন। তবে আজ শুক্রবার দূরের পর্যটকেরা এসেছেন কুয়াকাটায়। আগামী রোববার পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকবে।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন পূর্ব-পশ্চিম দিকের অন্তত চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাজার হাজার পর্যটক গোসল করছেন। মো. হাবিবুর রহমান নামের এক পর্যটক বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে তাঁর মতো বেড়াতে আসা অনেকেই অস্বস্তিতে পড়েছেন। ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিতে নেমে পড়েছেন তাঁরা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও নোনাজল ছেড়ে উঠছিলেন না অনেকে। এর বাইরে লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লি, গঙ্গামতী সৈকত, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধমন্দির, রাখাইন মহিলা মার্কেট, ঝিনুক মার্কেটসহ আকর্ষণীয় সব স্পটে পর্যটকের ব্যাপক আনাগোনা লক্ষ করা যায়। পর্যটকদের আগমনের কারণে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলে বিক্রিও বেশ ভালো হয়েছে।

এদিকে পর্যটকদের আগমনের কারণে বেচাকেনা বেড়েছে প্রতিটি দোকানে। কুয়াকাটা চৌরাস্তা এলাকার ঝিনুক ব্যবসায়ী মো. শাহীন আলম বলেন, দুই দিন ধরে ভালো বিক্রি করছি। ঝিনুক ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকে দৈনিক ৪০-৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। বড় দোকানিরা আরও বেশি বিক্রি করেছেন।

বিকেলে ভিড় বাড়ে আরও বেশি
ছবি: প্রথম আলো

কুয়াকাটা ভূঁইয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, বছরের দুটি ঈদ এবং শীত মৌসুমে পর্যটকদের আগমনের ওপর ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভর করে। এসব বিশেষ দিনেও যদি কোনো পর্যটক না আসেন, তখন ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এবারের ঈদ ও বৈশাখের ছুটিতে তাঁদের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। এতে প্রত্যেক ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেছেন, কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এবারের ঈদ কেন্দ্র করে পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিটি হোটেলই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তবে প্রথম শ্রেণির ১০-১৫টি হোটেলে আশা অনুযায়ী কক্ষ ভাড়া হয়েছে। বাকি হোটেলগুলোর ৬০-৭০ শতাংশ কক্ষ ভাড়া হয়েছে। আগামী দু-এক দিনে এ সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরও পড়ুন

হোটেল ডি-মোরের মহাব্যবস্থাপক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, কুয়াকাটায় আসলে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। কুয়াকাটার সঙ্গে চর বিজয়, সুন্দরবন, সোনার চরসহ আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে ট্যুর বোটের মাধ্যমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ইকোট্যুরিজম করার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে কুয়াকাটা ও গঙ্গামতী সৈকত এলাকায়। মোটকথা, কুয়াকাটাকে নিয়ে ভাবতে হবে। সেটা করতে না পারলে কুয়াকাটা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবেন।

গোল্ডস্যান্ডস গ্রুপের পরিচালক বাহার শাহদাত হোসেন জানালেন, কুয়াকাটা সৈকতকে সুরক্ষা করা, রাস্তাঘাটের সৌন্দর্যবর্ধন করা, ধুলাবালুমুক্ত করাসহ যেসব অব্যবস্থাপনা রয়েছে, তা দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। কুয়াকাটাকে আকর্ষণীয় করা গেলে কুয়াকাটার প্রতি মানুষের আগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনি কুয়াকাটার ব্যবসা-বাণিজ্যও আরও সম্প্রসারিত হবে।

কুয়াকাটায় ব্যাপক পর্যটকের আগমনের কারণে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে উপজেলা প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানালেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঈদ-পরবর্তী সময়ের কথা চিন্তা করে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভ্রাম্যমাণ আদালত। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ আদালত মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে চিকিৎসক দল ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি দলকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যটকেরা যাতে বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে এসে নিরাপদে পার্কিং করতে পারেন, সে জন্য তিনটি পার্কিং প্লেস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কুয়াকাটা সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মাত্র কয়েক দিন আগে সৈকত ও পাশের এলাকা থেকে অবৈধ বেশ কিছু স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আশা করছি পর্যটকেরা এবার কুয়াকাটায় ভ্রমণ করে আনন্দ পাবেন।’

আরও পড়ুন

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য পার্ক নির্মাণ, আকর্ষণীয় স্থানের শোভাবর্ধন, সৈকত এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কে বৈদ্যুতিক বাতি দেওয়াসহ বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কাজ শেষ করা গেলে কুয়াকাটা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হবে।