রাজশাহী বাজারে আম নেই, কোথাও কোথাও গুটি আম পাড়া শুরু

জেলা প্রশাসকের বেঁধে দেওয়া সময়ে ভাঙা হচ্ছে আম। বুধবার সকাল রাজশাহী নগরের জিন্নানগর এলাকায়ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী জেলার ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আজ বুধবার থেকে গুটি আম গাছ থেকে নামানোর কথা। তবে হাটে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কোনো আম পাওয়া যায়নি। রাজশাহী জেলার মধ্যে আমের সবচেয়ে বড় হাট বানেশ্বর বাজার। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের ওপরই বসে হাটটি। সেই হাটে আজ আম পাওয়া যায়নি। তবে কোথাও কোথাও বাগান থেকে কিছু আম নামানো হয়েছে। সেগুলা বাগান থেকেই বিক্রি হয়েছে।

১২ মে রাজশাহী জেলার আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেদিন জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত পর্যবেক্ষণ-সংক্রান্ত সভায় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে আম নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয়।

আরও পড়ুন

ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামাতে পারবেন চাষিরা। গত বছর আম পাড়া শুরুর সময় ছিল ৪ মে। তার আগেরবার ছিল ১৩ মে থেকে। আবহাওয়ার কারণে এবার সময় পিছিয়েছে। তবে আমচাষিরা বলছেন, এবার আম বাজারে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এবার গোপালভোগ বা রানিপসন্দ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি, ৫ জুলাই বারি-৪ আম, ১০ জুলাই আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

জেলা প্রশাসকের বেধে দেওয়া সময়ে ভাঙা হচ্ছে আম। বুধবার সকালে রাজশাহী নগরের জিন্নানগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের জিন্নাহ নগর এলাকায় সাত বিঘার আমবাগান আছে রাজ চাঁপাই অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সংগঠনের সভাপতি আনোয়ারুল হকের। আজ তাঁর বাগান থেকে আম নামিয়েছেন। আম নামিয়ে বাগান থেকেই বিক্রি হয়েছে। ৪০ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করেছেন। প্রথম আলোকে আনোয়ারুল বলেন, তাঁর বাগানের আম পরিপক্ব হয়েছে। দু-এক দিন রাখলেই পেকে যাবে। ধীরে ধীরে আম আরও ভাঙবেন।

এদিকে রাজশাহীর বাঘার আমচাষি নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাগানের আম ভাঙতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। তবে তিনি সরাসরি বাগান থেকে আচার তৈরির জন্য আম ভাঙছেন বেশ কয়েক দিন ধরে। সেগুলো নারায়ণগঞ্জে চলে যাচ্ছে। একই উপজেলার খুদিছয়ঘাটি গ্রামের আমচাষি আবদুল উহাহেদ সেনরি জাতের গুটি আম পেড়েছেন আজ।

দুপুরে রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে গিয়ে আম পাওয়া যায়নি। কেউ আম বিক্রি করতে আসেননি। বাজারের ইজারাদার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর এই দিনে আম উঠে গেছে। কিন্তু এবার আম নেই। এ বছর গাছে আমও কম। আম নিয়ে মাতামাতিও তাই কম।

রাজশাহীর আম পাড়া শুরু হবে মূলত ১৫ মে। এরপর আরও তিন মাসের বেশি সময় বিভিন্ন জাতের আম গাছে থাকবে
ইনফোগ্রাফিকস: প্রথম আলো

কৃষি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এবার আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল আসতে দেরি হয়েছে। মুকুলও কম হয়েছে। আবার মার্চের দিকে বৃষ্টির কারণে মুকুল নষ্ট হয়েছে। পরে দীর্ঘ খরা গেছে। খরায় আম ঝরেও পড়েছে। তবে এবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড় না হওয়ায় যতটুকু আম ছিল, তা রয়েছে। এবার রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন আমের উৎপাদন হবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছা. সাবিনা বেগম বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভার সময় তাঁরা কিছু পরিপক্ব গুটি আম নিয়ে গিয়েছিলেন। বাঘা-চারঘাটের অনেক গাছে আম পেকে পড়ার খবর আছে তাঁদের কাছে। আজ অনেক জায়গায় আমপাড়া শুরু হয়েছে। তবে কী পরিমাণ পাড়া হয়েছে, কী দরে বিক্রি হচ্ছে, সেই তথ্য এখনো আসেনি। তাঁরা এসব তথ্য সংগ্রহ করবেন আজ।