ত্রিশালে বিএনপির নেতার কাছে কেন হারলেন সংসদ সদস্যের স্ত্রী

আমিনুল ইসলামছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় বর্তমান সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামানের স্ত্রী শামীমা আক্তারকে হারিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম। এই নির্বাচন নিয়ে নানাজন নানা কথা বলছেন। কারও কারও ভাষ্য, ভোটারদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগবিরোধী মনোভাবের কারণেই আমিনুল নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

আমিনুল ইসলাম ত্রিশাল উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য। তবে বর্তমানে তিনি বিএনপির নেতা হিসেবেই পরিচিত।

ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এখন শক্ত অবস্থানে। এমন সময় বিএনপির নেতার কাছে হেরে যাওয়ার ঘটনা কারও কারও কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে। তবে কেউ কেউ বলছেন, এটাই স্বাভাবিক ও বর্তমান বাস্তবতার চিত্র। এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। এমনকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাও নির্বাচনে অংশ নেননি। শামীমা আক্তার ত্রিশাল উপজেলা মহিলা লীগের সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুজ্জামানের স্ত্রী। যে কারণে শামীমা আক্তারকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীই মনে করেছেন কেউ কেউ। ফলে দলটির অন্য কেউ প্রার্থী হননি।

এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, এই নির্বাচনে আঞ্চলিক প্রভাব কাজ করেছে। যে কারণে আমিনুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাঁরা নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন, শামীমা আক্তারের এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তাঁদের কোনো পরামর্শ চাওয়া হয়নি। এ ছাড়া নিজের ছেড়ে দেওয়া মেয়র পদের জন্য স্ত্রীকে প্রার্থী করেন এ বি এম আনিসুজ্জামান। যে কারণে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা আর প্রার্থী হননি।

স্থানীয় লোকজন ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদ ছেড়ে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ বি এম আনিসুজ্জামান। জাতীয় নির্বাচন শেষ হতেই কিছুদিনের মধ্যে আবার পৌরসভার মেয়র নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সংসদ নির্বাচনে আনিসুজ্জামান ছিলেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় কোনো নিষেধ না থাকায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী আনিসুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন। সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও একটি নির্বাচনে সংসদ সদস্যের স্ত্রী প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিকে নেতা-কর্মীরা সহজভাবে মেনে নেননি। যে কারণে ভোটে পরাজয় হয়েছে শামীমা আক্তারের।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, আগামী মে মাস থেকে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও উন্মুক্ত করে দেবে আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থায় ত্রিশাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের তিন থেকে চারজন নেতার প্রস্তুতি আছে। এদিকে মেয়র পদে উপনির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থী দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন ১৭ মাস। এই অল্প সময়ের জন্য মেয়র হওয়ার চেয়ে পাঁচ বছরের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার আশা জাগিয়ে রেখেছেন নেতাদের কেউ কেউ। ফলে এই নির্বাচনে অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের অংশ না নেওয়া, এটাও একটি কারণ।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আজ রোববার দুপুরে সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামানের মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ত্রিশালের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই সংসদ সদস্যের স্ত্রীর মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না। নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে শামীমা আক্তারের পক্ষে কাজ করলেও সেটি যথাযথ ছিল না। যে কারণে বিএনপির নেতা জয় পেয়েছেন।

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ত্রিশাল বিএনপির কোনো পদে আমিনুল ইসলাম ছিলেন না। তবে বিএনপিতে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদ ছিল। মেয়র নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সেই প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

নির্বাচনে আমিনুল ইসলামের বিজয়ের বিষয়ে মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিএনপির নামেই আমিনুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। মানুষ এখন চরমভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী। আমিনুল ইসলামের মধ্যে বিএনপির ‘গন্ধ’ থাকায় মানুষ তাঁকে নির্বাচিত করেছেন।