রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ায় কুড়িগ্রামে ভাঙন
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিতে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নীলফামারীর ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গতকাল রোববার রাত থেকে আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ৮৫ মিলিমিটার ও নীলফামারীতে ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
আজ সকালে রংপুরের কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার নদীপারের বাসিন্দারা জানান, তিন দিনের বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়ল না। এখন পানি বাড়ার কারণ হলো, উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইছলি ও বাগডোগড়া এলাকায় বাড়ির উঠানে পানি উঠতে শুরু করেছে।
ইছলি এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এবার অসময়ে নদীর পানি বাড়লে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। চরের জমির আমন ধান নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি।
গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মিটারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, ‘এবার নিয়া ছয়বার উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসার ঘটনা ঘটছে। তাই নদীতীরবর্তী মানুষের কষ্টের শেষ নাই। বলাও যায় না যে পানি কখন বাড়বে-কমবে।’
পানি বাড়ায় তিস্তাপারের কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুর, গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিত ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
রংপুর পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, দেশের উজানে ভারতের কোচবিহার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পংসহ আরও কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেই উজানের পানি নেমে আসায় তিস্তার পানি বাড়ছে।
এদিকে কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদের পানি চার দিন থেকে সমতলে বাড়া অব্যাহত আছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। চিলমারী উপজেলার শাখাহাতির চর, নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর পদ্মারচর, রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়ন এবং রৌমারী উপজেলার চর শৈলমারী ইউনিয়নের সুখের বাতির চরে নদের ভাঙন বেড়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের পদ্মারচরের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে পাগলার বাজারের ২২টি দোকান নদে বিলীন হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র ভাঙনে পদ্মারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদ্মারচর আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ তিন শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। ভারী বৃষ্টি কমে গেলে সব নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক হবে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য রাজিয়া বেগম বলেন, গত ছয় দিন থেকে টানা বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা নামার চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নামার চর, মধ্যপাড়া গ্রামের অর্ধশতাধিক বাড়ি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি এভাবে বাড়তে থাকলে তিস্তার নিম্নাঞ্চলে আবারও বন্যা দেখা দেবে।