যশোরে বৃষ্টিতে উৎপাদন ব্যাহত, সবজির দাম চড়া
এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে যশোরে বেগুনগাছের ফুল ঝরে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে ১৫ দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে বেগুনের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু বেগুন নয়, পেঁপে, কাঁচা মরিচ, মুলা, পটোলসহ বিভিন্ন সবজির দামও বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মনজুরুল হক বলেন, টানা বৃষ্টিতে যশোরের শাকসবজির উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে বাজারে শাকসবজির সরবরাহ কম।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রীষ্ম ও আগাম শীতকালীন সবজি মিলিয়ে যশোর জেলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়েছে। বৃষ্টিতে কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান কৃষি বিভাগের কাছে না থাকলেও উৎপাদন যে ব্যাহত হয়েছে, সেটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার যশোরের বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৬০, লাউ ৪০ থেকে ৫০, ওল ৬০ থেকে ৭০, কাঁচা মরিচ ২০০ ও বাঁধাকপি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫ দিন আগে বেগুন ৫০ থেকে ৬০, লাউ ৩০ থেকে ৪০, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০, মিষ্টিকুমড়া ৩০ ও বাঁধাকপি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে কোনো কোনো সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য দাম বাড়তে পারে।
যশোর সদর উপজেলার উত্তর ললিতদাহ গ্রামের কৃষক ওবায়দুর ইসলাম এ বছর ১ বিঘা জমিতে বেগুন ও ১২ বিঘা জমিতে মুলার আবাদ করেছেন। টানা বৃষ্টিতে তাঁর সবজিখেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বেগুনখেতের ফুল ঝরে গেছে। এতে উৎপাদন কম হয়েছে। গত বুধবার চূড়ামনকাটি বাজারে ১৬ কেজি বেগুন নিয়ে ৬০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। বৃষ্টির আগে খেত থেকে সপ্তাহে দেড় থেকে দুই মণ বেগুন উঠত। এখন সেখানে সপ্তাহে তিন ভাগের এক ভাগ বেগুন উঠছে। মুলার খেতে পানি জমেও কমবেশি ক্ষতি হয়েছে।’
বাজারে সবজিসহ নিত্যপণ্যের প্রতিনিয়ত দাম বাড়ায় শহরের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। শহরের স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা বড় বাজারে কাঁচাবাজার করতে গিয়ে বলেন, মূলত ছাত্রাবাসে নির্ধারিত অঙ্কের টাকার মধ্যে বাজার করতে হয়। ২২ সদস্যের বাজার সদাই নির্দিষ্ট ওই টাকাতেই সারতে হয়। সবজি ও মাছের যে পরিমাণে দাম বেড়েছে, তাতে বাধ্য হয়ে খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনতে হচ্ছে।
ডিম-আলু-পেঁয়াজের দাম লাগামহীন
বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এই তিনটি খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। বরং সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নানা অজুহাত দেখিয়ে বেশি দামে এই পণ্য তিনটি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান শেষ হলে ব্যবসায়ীরা আগের দামেই পণ্য বেচাকেনা করছেন। তবে ক্রেতারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমেই। তাদের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা নেই।
অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দাম ঘোষণা করলেও পাইকারি বাজার থেকে সেই দামে তাঁরা কিনতে পারছেন না এই তিন পণ্য।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিম, আলু ও পেঁয়াজ—এই তিন খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪-৬৫ টাকা আর প্রতিটি ডিম সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে। এই তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে এগুলো।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে যশোরের বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়, ডিম প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে সাড়ে ১২ টাকায়। বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে আগে যে দাম ছিল, এখনো সেই দামই আছে।
দাম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার মনিটরিং করে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। তাতেও বাজারের প্রভাব পড়ছে না বলে আগামী রোববার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এ–সংক্রান্ত জরুরি একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির তুলনামূলক সরবরাহ কম বলে দাম কিছুটা বাড়তি।