তামিলনাড়ুর সেই যুবক এবার ‘প্রেমিকা’র পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে তালতলীতে
প্রেমের টানে বরিশালে আসা ভারতের তামিলনাড়ুর যুবক প্রেমাকান্ত (৩৬) তাঁর কথিত প্রেমিকার বাড়ি বরগুনার তালতলীতে গেছেন। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি তালতলী পৌঁছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে ওঠেন। সেখানেই তিনি অবস্থান করছেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তিনি সড়কপথে বরগুনায় পৌঁছান। সেখানে রাত্রিযাপনের পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি তালতলীর উদ্দেশে রওনা করেন। তালতলী ডাকবাংলোতে তাঁর অবস্থানের খবর পেয়ে সেখানে স্থানীয় সাংবাদিক এবং উৎসুক লোকজন ভিড় করেন। তবে তিনি কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। এমনকি ছবিও তুলতেও রাজি হচ্ছেন না। মুখে কালো মাস্ক, কালো শার্ট আর অফ-হোয়াইট প্যান্ট পরা প্রেমাকান্তকে কিছুটা ভীত ও উদ্ভ্রান্ত মনে হচ্ছিল।
অনেক অনুরোধের পর তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন। প্রেমাকান্ত এ সময় বলেন, গত ২৪ জুলাই তিনি বাংলাদেশে আসেন প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করার জন্য। বরিশালে তাঁদের তিনবার দেখাও হয়েছে। এরপর থেকে তাঁর প্রেমিকা তাঁকে এড়িয়ে যেতে থাকে। কী কারণ তিনি জানেন না। বিষয়টি তাঁর কাছে অবাক লাগছে। তবে তিনি মেয়েটিকে অবিশ্বাস করেন না। তাঁর ধারণা, কারও চাপে পড়ে সে তাঁকে এড়িয়ে চলছে। তিনি এ জন্য মেয়েটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে এখানে এসেছেন। প্রেমাকান্ত তাঁদের সঙ্গে দেখা না করে, কথা না বলে বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাবেন না বলে জানান।
মেয়েটি দেখা করতে চাইছে না, তারপরেও জোর করে কেন দেখা করতে চাইছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেমাকান্ত কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘দেখুন, আমাদের তিন বছরের সম্পর্ক। এটা কোনো ছেলেখেলা নয়। তার জন্যই আমি এ দেশে এসেছি। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য, কথা বলার জন্য।’
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আপনার কথিত প্রেমিকা এখনো অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাই তার বিয়ে করার আইনগত বয়স হয়নি, এমন কথা জানালে প্রেমাকান্ত বলেন, ‘আমি এটা অবগত হয়েছি। আমি তাকে বিয়ের জন্য জোর করছি না। আমি তার সঙ্গে, তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চাই, কথা বলতে চাই।’
দেখা করে কী বলবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে আমাকে কেন এড়িয়ে যাচ্ছে, সেটার কারণ জানতে চাই। হয়তো তাকে কেউ ভুল বোঝাচ্ছে।’ এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভারতীয় নাগরিক প্রেমাকান্ত। বলেন, ‘আমাকে বরিশালে নির্মমভাবে মারা হয়েছে। আমি জানি না কী অপরাধ আমার। তবু আমি পিছু হটছি না, আমার প্রেমিকা ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা না করে যাব না।’
বিকেল চারটার দিকে তালতলী থানার দুজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রেমাকান্তর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তারা প্রেমাকান্তকে তালতলী উপজেলা থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এখানে অবস্থান করলে তাঁর (প্রেমাকান্ত) আইনগত সমস্যা হবে বলেও সতর্ক করেন। তবে প্রেমাকান্ত তাঁর সিদ্ধান্তে অটল। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তাঁর প্রেমিকা এবং তার মা-বাবার সঙ্গে কথা না বলে তিনি এখান থেকে যাবেন না।
তবে তিনি প্রেমিকা ও পরিবারের কারও সঙ্গে বিকেল পর্যন্ত দেখা করতে বা কথা বলতে পারেননি।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের তামিলনাড়ু থেকে একটি ছেলে আসার খবর শোনার পর তাঁর খোঁজখবর নিতে দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা সেখানে গিয়ে সবকিছু শুনে দেশের বিবাহ আইনের বিষয়ে তাঁকে অবগত করেন এবং তাঁকে তাঁর নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
প্রেমাকান্তের দাবি, ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েটির সঙ্গে পরিচয়। প্রথমে মেয়েটি প্রেমাকান্তের ভিডিওতে নিয়মিত লাইক ও কমেন্ট করত। এরপর দুজনের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ থেকে প্রেম হয়। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রেমাকান্ত বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে অনেক আগেই তিনি এ দেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আর আসা হয়নি। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় তিনি মনস্থির করেন, দূর থেকে আর নয়, সরাসরি দেখবেন মনের মানুষটিকে। শেষমেশ গত ২৪ জুলাই তিনি বরিশালে আসেন। ২৭ জুলাই মেয়েটির সঙ্গে শহরে ঘুরতে বের হয়ে চয়ন হালদার নামের এক যুবক দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে ওই মেয়ের। এরপর চয়ন প্রেমাকান্তকে মারধর করেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে টাকাও ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনার পর মেয়েটি ও তার পরিবারের সঙ্গেও তিনি আর যোগাযোগ করতে পারেননি।
মারধরের বিষয়ে প্রেমাকান্ত বরিশাল মেট্রোপলিটনের বিমানবন্দর থানায় গিয়ে ওই দিন অভিযোগ করেন। এরপর তিন দিন তাঁকে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়। পরে বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের জানায় বরিশাল বিমানবন্দর থানার পুলিশ। হাইকমিশনের কর্মকর্তারা প্রেমাকান্তের সঙ্গে কথা বলেন। ‘প্রেমিকা’ দাবি করা মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে প্রেমাকান্তকে জানান। পরে হাইকমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলেটি নিজ দায়িত্বে ভারতে চলে যাওয়ার কথা বললে ১ আগস্ট ঢাকার একটি বাসে উঠিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশ তাঁকে ঢাকাগামী বাসে তুলে দিলে তিনি মাঝপথে নেমে আবার বরিশালে ফিরে আসেন।
আজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যত দূর জেনেছি, ওই যুবক এখনো তালতলীতে অবস্থান করছে।’