কুমিল্লায় যুবলীগ নেতাকে হত্যা মামলার তিন আসামির পরিচয় জানাল র‍্যাব, একজন আওয়ামী লীগ নেতা

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় নগরের শাকতলা কোম্পানী দপ্তরে
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন হত্যা মামলার এজাহারনামীয় তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও আছেন। মামলার এজাহারনামীয় অপর ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজন বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় র‌্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ কুমিল্লার শাকতলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরা হয়। র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

আরও পড়ুন

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মামলার ৩ নম্বর আসামি তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গ্রামের ইসমাইল (৩৬), ৪ নম্বর আসামি তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রামের মো. শাহিনুল ইসলাম (৪৬) ও  ৮ নম্বর আসামি দাউদকান্দি উপজেলার গোপচর গ্রামের শাহআলম (৩৮)।

শাহিনুল ইসলাম তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ২০১৪ সালে তিতাস উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। শাহিনুল ইসলামের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার হোসেন তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলা আছে। অন্যদিকে, গ্রেপ্তার ইসমাইলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ তিনটি ও শাহআলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ ১০টি মামলা আছে।

র‌্যাব কার্যালয়ে গাড়িতে ওঠার সময় আসামি শাহিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সামনে তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হবে। ওই কমিটিতে আমি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। সেটা যেন হতে না পারি, সে জন্য আমাকে জামাল হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয়। গৌরীপুর দাউদকান্দি উপজেলায়। আমি গৌরীপুরে যাইনি। সেখানে থাকিও না। আমি তিতাসের বাসিন্দা। প্রতিহিংসা থেকে আমাকে মামলার আসামি করা হয়।’

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মামলার এজাহারনামীয় অপর ছয় আসামির মধ্যে সুজন (৩২) ও আরিফ (২৮) নেপালে, বাদল (৪৫) দুবাইতে, শাকিল (৩৫) ভারতে এবং অলি হাসান (৩৯) সৌদি আরবে পালিয়ে গেছেন। আর কালা মনির (৪২) আত্মগোপনে আছেন। বিদেশে অবস্থানরত আসামিদের দেশে ফেরাতে ও হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য র‌্যাব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জামাল হোসেন
সংগৃহীত

থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার পর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর পশ্চিম বাজার বাইতুন নূর জামে মসজিদ এলাকার সুমাইয়া কনফেকশনারির সামনে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে জামাল হোসেনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে নিহত জামাল হোসেনের স্ত্রী পপি আক্তার বাদী হয়ে দাউদকান্দি থানায় নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। নিহত জামাল হোসেন জিয়ারকান্দি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা।

আরও পড়ুন

র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৬ মে সকাল ছয়টায় রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকা থেকে শাহিনুল ইসলাম, মিরপুর এলাকা থেকে শাহ আলমকে ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

তানভীর মাহমুদ আরও বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বোরকা পরা তিন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী স্বাভাবিক পথচারীর বেশে ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় জামাল হোসেন ও ইসমাইল পূর্বপরিচিত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে একটি দোকানে ছিলেন। বোরকা পরা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অতর্কিতভাবে গুলি ছোড়ে। এই সময় অস্ত্রধারী একজনের সঙ্গে জামালের ধস্তাধস্তি হয়। তখন সঙ্গে থাকা আরেক অস্ত্রধারী জামালকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। আরও একজন খুব কাছ থেকে জামালের মাথায় ও বুকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া আসামিরা দৌড়ে পালানোর সময় একজনের বোরকার মুখের আবরণ (নেকাব) খুলে যায় এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের ধাক্কা লেগে অস্ত্র পড়ে যায়। পরে তাঁরা সেই অস্ত্র উদ্ধার করে চলে যায়। অস্ত্রধারীরা যে পথে ঘটনাস্থলে আসে, সেই পথ পরিবর্তন করে অন্য পথে চলে যায়। তখন তাঁদের পরনে বোরকা দেখা যায়নি।

র‌্যাবের কুমিল্লার কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বোরকা পরা তিন ব্যক্তি ঘটনার পরপরই বিদেশে পালিয়ে যান। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আরও দুজন বিদেশে। একজন দেশে আত্মগোপনে।
দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, তিন আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন