৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি

আদালতপ্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে অপহরণ মামলায় আইনের সংস্পর্শে নেওয়া সাত বছরের শিশুটি পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরে গেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়। শিশুটির মা কারাগারে আর বাবা সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ায় মুক্তি পেলেও কোনো অভিভাবক না থাকায় শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেন আদালত।

‘চট্টগ্রামে ৭ বছরের শিশুর নামে মামলা নিল পুলিশ, তিন দিনেও মেলেনি মুক্তি’ শিরোনামে গত রোববার প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আদালতপাড়া ও নগর পুলিশে আলোচিত হয় বিষয়টি। এর আগে গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) শিশুটিকে অপহরণ মামলায় গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে সোমবার হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রবেশন কর্মকর্তা মনজুর মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জাহাজে ছিলাম। সেখান থেকে আসার পর ছেলেকে জিম্মায় নিয়েছি।’

এদিকে আইনে না থাকলেও মামলাটি গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফের মহাসচিব আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিপূর্বেও সাত বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়। এখনকার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, সবার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। এটি ভুলে নয়, কাজে অবহেলার কারণে হয়েছে।’

আরও পড়ুন

যেভাবে শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা

ঘটনার শুরু চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল। চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় বসবাসরত আনোয়ারা বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান অসুস্থ হলে সেদিন চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সঙ্গে নিয়ে যান চার বছরের ছোট সন্তান মো. রামিমকেও। কিন্তু রামিম সেখান থেকে হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রামিমকে না পেয়ে ঘটনার সাত মাস পর গত শুক্রবার পাঁচলাইশ থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মা আনোয়ারা বেগম।

এ ঘটনায় সাত বছরের শিশু ও তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী জানতে পারেন, তাঁর ছেলেকে হাসপাতালের বারান্দা থেকে সাত বছরের ওই শিশু ও তার মা খেলার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যান। মামলা হওয়ার পর ওই দিনই পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক ষোলশহর এলাকা থেকে সাত বছরের শিশুর মাকে গ্রেপ্তার করেন। আইনের সংস্পর্শে নেওয়া হয় শিশুটিকেও। মা যান কারাগারে, শিশুটি টঙ্গীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জামিনে মুক্তির পর সোমবার সেখান থেকে হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে এনে রাখা হয়।

জানতে চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিউল মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইন ও দণ্ডবিধিতে ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া কিংবা আইনের সংস্পর্শে নেওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন