কালকিনিতে তাহমিনা বেগমের বিজয় মিছিলে বোমা হামলা, আহত ১০

সোমবার সকাল থেকে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইগল ও নৌকার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাড়িঘরে ভাঙচুর হয়। কালকিনি পৌরশহরে
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের বিজয় মিছিলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের কালীনগর এলাকার এমরাত সরদার (৪০) ও আক্কেল আলী সরদার (৪০), দক্ষিণ কানাইপুর এলাকার আবু বকর (৩০), মিরাকান্দি এলাকার রুবেল ফকির (২৬) ও আজিম চৌকিদার (২৫), টুমচর এলাকার মো. ইশরাক (১৬), আলীনগর এলাকার রফিক ফকির (২৫)।

দলীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর-৩ (সদর একাংশ, কালকিনি ও ডাসার) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান ও সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে গোলাপকে ৩৪ হাজার ৬৬২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম (ঈগল)। বিজয়ী তাহমিনা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর আবদুস সোবহান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকালে তাহমিনার সমর্থক আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সরদারের নেতৃত্বে একটি বিজয় মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কালিগঞ্জ থেকে ফাসিয়াতলা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। পথে আলীনগর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান শাহেদ পারভেজের সমর্থকেরা মিছিলে অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে আহত হয় অন্তত ১০ জন।

আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল থেকে এমরাত সরদার ও আবু বকরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
বিজয়ী তাহমিনা বেগম
ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহমুদ বলেন, বোমা হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে বেশ কয়েকজন এসেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরাও জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের সবার শরীরের বোমার আঘাতের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আলী হোসেন বলেন, বিজয় মিছিলের সামনে ও পেছন থেকে এই বোমা হামলা চালানো হয়। একের পর এক বোমা ছোড়া হয়। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু হয় যায়। পরে পুলিশ এলে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এদিকে ঘটনাস্থল থেকে আলীনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। থানায় নেওয়ার আগে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঈগলের মিছিলে লক্ষ্য করে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহেদ পারভেজের লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আমাদের অনেক লোক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন গুরুতর অবস্থা। একজনের হাতের কবজি উড়ে গেছে।’

আরও পড়ুন

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে আলীনগর ইউপির চেয়ারম্যান শাহেদ পারভেজ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। গতকাল রাত থেকেই ঈগলের অনুসারী হাফিজুর তাঁর লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। আজ সকালে হাফিজুর তাঁর লোকজন নিয়ে ফাসিয়াতলা বাজারে আসেন। তখন সবার হাতে দেশীয় অস্ত্র ও বোমা ছিল। এ সময় ইমরাত নামের একজনের ব্যাগে থাকা একটি বোমা বিস্ফোরিত হলে তিনি গুরুতর আহত হন। হাফিজুর ওই সময় আমার কর্মীদের ওপরে হামলা চালানোর নির্দেশ দিলে সংঘর্ষ বাধে। বিষয়টি আমি পুলিশকে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং হাফিজুর আটক করে।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, কালকিনিতে যেসব এলাকায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা হচ্ছে, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে।

আরও পড়ুন

এদিকে আজ সকাল থেকে সাহেবরামপুর, লক্ষ্মীপুর, কয়ারিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও কালকিনি পৌরসভার ভুরঘাটা, পুরান বাজারসহ তিনটি স্থানে ঈগল প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে নৌকার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

কালকিনি পৌরসভার মেয়র এস এম হানিফ বলেন, ঈগল প্রার্থীর লোকজন অতি উৎসাহী হয়ে এই হামলা চালাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে ঈগল প্রতীকে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘নির্বাচনে পরে আমার সব কর্মী সমর্থককে কোনো ধরনের সহিংসতা না করার নির্দেশনা দিয়েছি। সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি। কিন্তু কিছু এলাকায় সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। এখানে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপের উসকানিতে তাঁর কিছু কর্মী আমাদের বিজয় মিছিলে হামলা চালায়। এভাবেই সংঘর্ষ ছড়ায়। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি পুলিশের সহযোগিতাও চেয়েছি।’