গাজীপুরের কাপাসিয়া ও শ্রীপুর
সড়কে সড়কে ট্রলি–আতঙ্ক
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাটি ও ইট পরিবহনের কাজে ট্রলিগুলো ব্যবহার করা হয়। গ্রাম ও মফস্সল এলাকায় এগুলো বেশ জনপ্রিয়।
গাজীপুরের কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলাজুড়ে ছোট-বড় আঞ্চলিক সড়কের আতঙ্ক এখন অবৈধ ট্রলি। কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্র্যাক্টরকে বিশেষভাবে পরিবর্তন করে এসব ট্রলি বানানো হয়। এগুলোর নেই কোনো নিবন্ধন। চালকদেরও নেই কোনো প্রশিক্ষণ। এসব ট্রলির কারণে হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষিকাজে ব্যবহারের ট্রাক্টর স্বল্পমূল্যে কিনে মূল ইঞ্জিনের পেছনে ইচ্ছেমতো আকারের বডি জুড়ে দেওয়া হয়। এসব বডি তৈরিতে কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক নিয়মকানুন প্রয়োগ করা হয় না। ট্রাক্টর থেকে পরিবর্তিত রূপ পাওয়া এসব ট্রলি সড়কে চলাচল করে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাটি ও ইট পরিবহন কাজে এগুলো ব্যবহার করা হয়। ট্রাকের তুলনায় পরিবহন ব্যয় কম হওয়ায় এগুলো গ্রাম ও মফস্সল এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। কম পারিশ্রমিকে এসব ট্রলি চালাতে কাজে লাগানো হয় কম বয়সী চালকদের।
কাপাসিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রলি মহাসড়কে চলাচল অবৈধ। পুলিশ এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৯ মার্চ দুপুরে কাপাসিয়ার বল খেলা বাজার এলাকায় আঞ্চলিক সড়কে একটি ইটবোঝাই ট্রলি নিয়ন্ত্রণ হারায়। ট্রলিটি সড়কের অন্য একটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে ওই ট্রলিতে থাকা শ্রমিক মো. ইউসুফ ও আবু বক্কর ঘটনাস্থলে মারা যান। চলতি বছরের ৪ এপ্রিল কাপাসিয়ার রানীগঞ্জ-গাজীপুর আঞ্চলিক সড়কের গোসাইরগাঁও এলাকায় মাটিবোঝাই একটি ট্রলি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে কবির হোসেন নামের এক ব্যক্তি মারা যান। আহত হন ট্রলিচালকসহ আরও দুজন।
এর আগে কাপাসিয়ার বারিষাব ইউনিয়নের বানারকান্দি গ্রামে মাটি বহনকারী একটি ট্রলি উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ওই ট্রলির চালক মো. আরিফ ঘটনাস্থলেই মারা যান। গত বছরের ২৫ জুন দুপুরে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের সোহাদিয়া গ্রামে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয় একটি বালুবাহী ট্রলি। এতে অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম মারা যান। গত বছরের ১৯ জুলাই লড়ি চাপায় মারা যান শ্রীপুর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি কবির হোসেন। শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া ট্রলির কারণে প্রতিনিয়তই সড়কে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। সূত্রগুলো জানায়, কাপাসিয়ার সনমানিয়া, কাপাসিয়া সদর, টোক ও বারিষাব এবং শ্রীপুরের বরমী, কাওরাইদ, রাজাবাড়ি ও গোসিংগা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ট্রলি চলাচল করে। দুই উপজেলাজুড়ে ট্রলির সংখ্যা অন্তত ৬০০টি।
এসব ট্রলি মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু প্রকাশ্যে দেদার চলাচল করছে ট্রলিগুলো। উচ্চ শব্দে প্রচণ্ড গতি নিয়ে চলা এসব ট্রলি সড়কে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
কাপাসিয়ায় কিছু দিন আগেও এসব ট্রলি চলাচলের জন্য ট্রলি মালিক সমিতি ছিল। বিভিন্ন কারণে ওই সমিতির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি কাজ করছে। কাপাসিয়া সদর ট্রলি মালিক সমিতির আহ্বায়ক রফিকুল ভুঁইয়ার দাবি, কম খরচে ট্রলি গ্রামে এখন বেশ জনপ্রিয়। সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন কাজে ইট, বালু, মাটি পরিবহনেও ব্যবহৃত হয়। এগুলো কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকদের দিয়ে পরিচালনা করা না হলেও দুর্ঘটনা ঘটে না।
কাপাসিয়ার সনমানিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, এলাকার রাস্তায় খুবই আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়। সড়কে অসংখ্য ট্রলি। উচ্চ গতিতে এগুলো দানবের মতো চলাচল করে।
এসব ট্রলির বিরুদ্ধে কিছু দিন আগেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানান কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ট্রলিসহ সব অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি। এগুলো শুধু কাপাসিয়াতে না, সারা বাংলাদেশেই ব্যবহার হচ্ছে। আমার মনে হয় পলিসি লেভেলে সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব যানবাহন বন্ধ করা উচিত।’