‘নাতির চেয়ে কম বয়সী ছেলেরা ধরে ধরে পেটাল’

হামলায় আহত উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের বাড়িতে আজ
ছবি: সংগৃহীত

‘বারবার অনুরোধ করছিলাম, আমার বয়স ৭১ বছর। আমার হার্টের সমস্যা আছে। তবু তারা শুনল না। হাতে থাকা লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। চার-পাঁচটা আঘাত শরীরে লাগে। বাম হাতের চারটি আঙুল ও কনুইয়ে লাগে। ফুলে যায়। যারা পেটাল, তাদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। আমার নাতির চেয়ে কম বয়স। বাস থেকে একজন একজন করে নামিয়ে পেটাল।’

কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। তিনি উপজেলা বিএনপির ২ নম্বর সহসভাপতি, একই ইউপির তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

১০ দফা দাবিতে খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাসের একটি বহর থামিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বেধড়ক মারধর করা হয়। ওই বহরে সামনের বাসের যাত্রী ছিলেন সিরাজুল। কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

আজ রোববার সকালে সিরাজুল প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর ভাষ্য, বর্তমান সময়ে সভা-সমাবেশের ব্যাপারে সরকার নমনীয়, এমন ধারণায় দৌলতপুর থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী খুলনার সমাবেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। শনিবার খুব সকালে তাঁরা প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে করে বের হন। কুষ্টিয়া শহর বাইপাস এলাকায় ১০ থেকে ১২টি গাড়ির বহর তৈরি হয়। বহরের একদম সামনের বাসে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত আটজন ছিলেন বিএনপির শাসনামলের বিভিন্ন ইউপির চেয়ারম্যান। বাসে সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জন ছিলেন। গাড়িগুলো খুব ভালোভাবেই যাচ্ছিল। কালীগঞ্জ বারোবাজার এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার আগে দুই থেকে তিনটি মোটরসাইকেলে পাঁচ থেকে ছয় ছেলে বাসের সামনে এতে গতিরোধ করেন। তাঁরা সামনের গ্লাস ভেঙে দেন। বকাবকি করতে থাকেন। এরপর সামনের দিকে চলে যান।

সিরাজুল ইসলাম বলতে থাকেন, বারোবাজার এলাকায় পৌঁছালে সামনে ৪০ থেকে ৫০ জন ছেলে হাতে লাঠি নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মোটরসাইকেল তিনটি তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় পেছনে থাকা কয়েকটি গাড়ি উল্টো দিকে চলে যায়। ছেলেরা দৌড়ে গিয়ে বাসগুলো ভাঙচুর করে। সামনের বাসের দরজা খুলে উপজেলা বিএনপির আরেক সহসভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন নেমে পড়েন। তাঁকে নিচে পেয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। তাঁরা বলতে থাকেন, ‘সমাবেশে কেন যাচ্ছিস? সমাবেশের যাওয়ার সাধ মেটাচ্ছি...।’ এরপর বাসের দরজার সামনে দাঁড়ানো তিনজন ছেলে একে একে বাসের ভেতর থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বের করেন আর মারতে থাকেন।

সিরাজুল ইসলাম যখন নামেন, তখন তিনি বলতে থাকেন, তিনি প্রবীণ ও অসুস্থ। তখন দুজন বলে ওঠেন, ‘এইটা মনে হয় সিনিয়র নেতা, মার।’ এই বলে ৪-৫টি লাঠির আঘাত করা হয় বলে সিরাজুলের ভাষ্য। পরে তিনি কয়েক কর্মীকে নিয়ে একটি ভ্যান ৫০০ টাকায় ভাড়া করে যশোর টার্মিনালে যান। দুপুরে কুষ্টিয়ায় ফিরে চিকিৎসা নেন। তাঁর মতো অধিকাংশ নেতা-কর্মী কুষ্টিয়ায় ফিরে আসেন।