জন্মদিন উদ্‌যাপন করা হলো না ছোট্ট শ্রাবণের

শ্রাবণ দেওয়ান

প্রতিবেশী এক শিশুর জন্মদিন ছিল গতকাল বুধবার। সে অনুষ্ঠানে যাবে বলে স্কুলে যেতে চাইছিল না খাগড়াছড়ির পৌর এলাকার খবংপুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্‌–প্রাথমিকের ছাত্র শ্রাবণ দেওয়ান (৫)। মা বাসনা চাকমা অনেকটা জোর করে ছেলেকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। বিদ্যালয়ের গেট ভেঙে ছেলের মৃত্যু তাই মানতে পারছেন না মা। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আহাজারি করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

বাসনা চাকমা বিলাপ করে বলছিলেন, বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে শ্রাবণ আবদার করেছিল এ বছর তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান করার। জন্মদিনে যেন রঙিন বেলুন দিয়ে ঘর সাজানো হয় আর বড় একটা কেক আনা হয়, মায়ের কাছে সেই বায়না করেছিল। কাকে কাকে তার জন্মদিনে আসতে বলবে, সে নামগুলোও বলেছিল শ্রাবণ।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রণয় দেওয়ান ও বাসনা চাকমার বিয়ের ছয় বছর পর শ্রাবণের জন্ম। একমাত্র সন্তান হওয়ায় কখনো চোখের আড়াল করতেন না। এই দম্পতি এখন কীভাবে বাঁচবেন, সে নিয়ে কথা বলছিলেন প্রতিবেশীরা।

এদিকে গতকাল সকালে স্কুলের গেট ভেঙে শ্রাবণ দেওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা পরিষদ সদস্য ও শিক্ষা বিভাগের আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী এই কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির সদস্যসচিব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন ও সদস্য জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম।

কমিটি গঠনের খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা পরিষদ সদস্য নিলোৎপল খীসা বলেন, ‘সাত দিন পর আমরা প্রতিবেদন জমা দেব।’

আজ সকালে খবংপুড়িয়া বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, রক্তের দাগ এখনো আছে। তবে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। স্কুলের পাশের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক দিন থেকে গেটটি ভাঙা। এই অবস্থায় একটা গাছের সঙ্গে গেটটি বেঁধে রাখা হয়েছিল। অনেকবার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বললেও এ বিষয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

আজ দুপুরে শিশু শ্রাবণ দেওয়ানের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুল রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ মামলা করেনি। তারপরও তদন্ত করে দেখা হবে।

আরও পড়ুন