‘নৌকার ভোট নিশ্চিত না হলে আসার দরকার নাই’ বলা আওয়ামী লীগ নেতাকে শোকজ

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বক্তব্য দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ
ছবি: প্রথম আলো

‘নৌকার ভোট নিশ্চিত না হলে আসার দরকার নাই’ বলা রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নৌকায় ভোট দিতে রাজি না হওয়ায় চড় দেওয়ার ঘটনায় রাজশাহী-৫ (দুর্গাপুর-পুঠিয়া) আসনের নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদের ছোট ভাই মো. আবু হানিফকেও শোকজ করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এসব নোটিশ পাঠান নির্বাচন কমিশন গঠিত এই আসনের অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ লুনা ফেরদৌস।

গত শুক্রবার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সনাতন মোড়ে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সামাদ। সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় গত রোববার বিকেলে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান (ঈগল প্রতীক) লিখিত অভিযোগ দেন।

আরও পড়ুন

ভিডিওতে আবদুস সামাদকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা সকলকেই কেন্দ্রে নিয়ে আসার চেষ্টা করব এবং যে বিএনপির মানুষ আসবে, তাদের নৌকা মার্কার ভোটটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের নৌকার ভোট নিশ্চিত না হলে (কেন্দ্রে) আসার দরকার নাই। সে তাইলে অন্য কাহিনি করবে। এটাকেও আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। যার কারণে সেভাবেই আপনারা কাজ করবেন।’

ওবায়দুর রহমানের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদের সমর্থক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ প্রচারণার বিভিন্ন জায়গায় উসকানিমূলক বক্তব্য ও হুমকি দিচ্ছেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আবদুস সামাদকে পাঠানো নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির নোটিশে বলা হয়েছে, ‘শুধু নৌকার নিশ্চিত ভোটাররাই ভোটকেন্দ্রে আসবে, অন্য ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার দরকার নাই—এরূপ বক্তব্য সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করবে। ভোট দেওয়ার অধিকার একজন মানুষের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার। একজন ভোটার তাঁর পছন্দের প্রার্থীকে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো কিংবা টাকাপয়সা দিয়ে বা কোনোরূপ প্রলোভন দেখিয়ে ভোটদানে প্রভাবিত করা স্পষ্টতাই আচরণবিধির লঙ্ঘন।’

আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ৩০ ডিসেম্বর বেলা তিনটার মধ্যে আবদুস সামাদকে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। তা না হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন একেবারে ঘরোয়া আলোচনায় এ কথা তিনি বলে ফেলেছিলেন। এটা যে পরে ছড়িয়ে পড়বে, তা তিনি বুঝতে পারেননি। তিনি নোটিশের ব্যাখ্যা দাখিল করবেন।

চড় দেওয়ায় প্রার্থীর ভাইকে শোকজ

এদিকে এক ভোটারকে চড় মারায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদের ছোট ভাই আবু হানিফকে শোকজ করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি।

আবু হানিফকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ওবায়দুর রহমান লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্যামপুর বাজারে গণসংযোগকালে নৌকা প্রতীকে ভোট চাওয়া হলে উমেদ আলী নামের এক ব্যক্তি নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন আবু হানিফ উমেদ আলীকে চড় মারেন। এ সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আবু হানিফ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বিব্রত হয়ে আবদুল ওয়াদুদও কিছু সময় পর নেতা-কর্মীদের নিয়ে চলে যান।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আবু হানিফকে ৩০ ডিসেম্বর বেলা তিনটার মধ্যে অনুসন্ধান কমিটির কার্যালয়ে সশরীর উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সেদিন ওই এলাকাতেই ছিলেন না। ঘটনার বিষয়েও জানেন না। নোটিশের ব্যাখ্যা তিনি দেবেন।