স্বজনের বাড়িতে যুবকের ‘গুলিবিদ্ধ’ লাশ রেখে পালালেন সঙ্গীরা

সীমান্ত
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার একটি ঝুপড়ি থেকে পুলিশ রোববার বিকেলে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, সীমান্তে অবৈধ পথে গরু পাচার করতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে ওই যুবক নিহত হয়েছেন। পরে তাঁর সঙ্গীরা মামলার ভয়ে এক আত্মীয়ের ঘরে ওই লাশ লুকিয়ে রাখেন।

পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউ নিশ্চিত করেনি ওই তরুণ কীভাবে মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তির নাম মানিক মিয়া (৩৫)। রোববার ভোররাতে রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের মোল্লারচর সীমান্তে এ গুলির ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় লোকজন ও গরু ব্যবসায়ীরা বলেন, রাতে একদল গরু ব্যবসায়ী মোল্লারচর সীমানা পিলারের পাশ দিয়ে অবৈধভাবে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে ভারতীয় গরু পাচার করছিলেন। এ সময় টহলরত কুচনিমারা ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। তখন মানিক মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকা লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রৌমারী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, গভীর রাতে কয়েকজন অসুস্থ এক যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সে সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক দুলাল চন্দ্র পাল প্রাথমিকভাবে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইসিজি করতে ওয়ার্ড বয়কে ডাকেন। এ সময় রোগীর লোকেরা পুলিশকে খবর দেওয়া হচ্ছে ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান।

চিকিৎসক দুলাল চন্দ্র পাল জানান, ‘যখন তাঁরা হাসপাতালে আসেন, ওই সময় বিদ্যুৎ ছিল না, তাই আমি শুধু রোগীর হাত দেখে প্রাথমিকভাবে মৃত ঘোষণা করি। পরে ইসিজি করার জন্য ওয়ার্ড বয়কে ডাকতে গেলে এসে দেখি, তাঁরা রোগী নিয়ে পালিয়েছেন। রোগীকে ভালোভাবে দেখার আমার সুযোগ হয়নি। তাই তাঁর শরীরে গুলির চিহ্ন আছে কি না বা তিনি কীভাবে মারা গেছেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব না।’

আরও পড়ুন

স্থানীয় লোকজন আরও বলেন, পুলিশ ও বিজিবির মামলার ভয়ে নিহতের লাশ নিয়ে সঙ্গীরা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান। পরে উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের বাঞ্চারচর গ্রামে মানিকের খালাতো ভাই আবদুল মোতালেবের বাড়িতে লাশটি নিয়ে যান এবং একটি ঝুপড়ি ঘরে লুকিয়ে রাখেন। খবর পেয়ে ১৬ ঘণ্টা পর রোববার বিকেলে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

মোতালেবের স্ত্রী সাজেদা খাতুন বলেন, ‘ভোররাতে কয়েকজন লোক মানিকের লাশ নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন এবং লাশ রেখে তাঁরা পালিয়ে যান।’

আরও পড়ুন

জামালপুর বিজিবি-৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে, এমন একটি খবর শুনেছি। ওই যুবক সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন কি না, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রূপ কুমার সরকার জানান, রোববার খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাঁ পাঁজরে একটি ছোট ফুটো এবং বুকের ডান দিকে আরেকটি ফুটো দেখা গেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রামে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

আরও পড়ুন