সন্ধ্যা আরও আগেই নেমেছে! মাঝবয়সী দুটি মানুষ পাশাপাশি দৌড়াচ্ছেন। এপাশ-ওপাশ বার কয়েক চক্কর দিলেন। এসে বসলেন পাকা বেঞ্চের মতো একটা জায়গায়। তখনো তাঁরা হাঁপাচ্ছিলেন। হিমেল হাওয়া বইছে, এর মধ্যেই দরদর করে ঘামছিলেন দুজন। কাছে গিয়ে পরিচয় জানাতেই পাশে বসতে বললেন। এরপর কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব মুহিবুর রহমান ও মঈনুল ইসলাম নামের ওই দুই ব্যক্তি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। দুজনের বাসা নগরের বাগবাড়ি এলাকায়। গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তাঁদের সঙ্গে কথা হয় সিলেট নগরে নবনির্মিত সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়েতে (হাঁটার পথ)।
মুহিবুর ও মঈনুল জানান, ওয়াকওয়েটি ছয় মাস আগে হয়েছে। তাঁরা নিয়মিতই এখানে ব্যায়াম করতে আসেন। তাঁদের মতো সকাল–বিকেল আরও অনেকে এখানে আসেন হাঁটতে বা দৌড়াতে, কেউ কেউ আসেন স্রেফ গল্পগুজব ও আড্ডা দিতে। আগে সাগরদিঘিরপাড় ছড়াটি (প্রাকৃতিক খাল) অরক্ষিত ছিল। পাড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়াত। পরে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে। তবে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে হাঁটাচলায় সমস্যা হয়।
সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, গত কয়েক বছরে কর্তৃপক্ষ নগরে সাতটি ছড়া ও জলাধারের আশপাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছে। এসব ওয়াকওয়ে নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। সব কটি ওয়াকওয়ের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার। ওয়াকওয়েগুলো নির্মাণের পর থেকেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে কিংবা একান্তে সময় কাটাতে নগরের বাসিন্দারা বিশেষ করে বিকেলের পর থেকে ভিড় জমাতে শুরু করেন।
বুধবার সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় নগরের সাগরদিঘিরপাড়, জল্লারপাড়, বালুচর, করেরপাড়া, গোয়াবাড়ি ও পুরোনো মেডিকেল রোড এলাকার মাদার কেয়ারের সামনের ওয়াকওয়ে ঘুরে অসংখ্য মানুষের পদচারণ চোখে পড়ল। কেউ কেউ জোরকদমে হাঁটছেন, কেউবা দৌড়াচ্ছেন। গোয়াবাড়ি, করেরপাড়া এলাকায় ওয়াকওয়ে ঘিরে একাধিক চটপটি ও ফুচকার দোকান দেখা গেল। এ ছাড়া জল্লারপাড় ওয়াকওয়েতে নানা মুখরোচক খাবারের অনেক দোকান পাওয়া গেল। অনেকে দল বেঁধে ওয়াকওয়েতে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি দোকানগুলোতে বসে খাচ্ছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, মেতেছেন গল্পগুজবে।
জল্লারপাড় ওয়াকওয়েতে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ আহমদের সঙ্গে। তিনি জানান, সিলেট নগরে বেড়ানো কিংবা আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর স্থানের সংকট আছে। ওয়াকওয়েগুলো নির্মিত হওয়ার পর এসব ঘিরে নগরবাসীর সময় কাটানোর একটা জায়গা হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, উপশহরের হলদিছড়ার ওপর নির্মিত ওয়াকওয়েটি ছাড়া বাকিগুলো বাসিন্দারা ব্যবহার করছেন। এসব স্থানে ঢোকার জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। নগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে ঘুরতে আসছেন। কেউ কেউ নিয়ম করে এসব স্থানে হাঁটছেনও। অনেকে আবার এসব স্থানে বসে গল্প-আড্ডায় সময় পার করছেন।
গোয়াবাড়ি ও করেরপাড়ার ওয়াকওয়েতে আলাপ হয় জনাপাঁচেক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, চা-বাগানের ঠিক পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত ছড়ার পাড়ে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। মানুষজন ওয়েকওয়েতে হাঁটতে হাঁটতে চা-বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
ওয়াকওয়েগুলোতে নগরবাসীর ঘুরে বেড়ানো ও উচ্ছ্বাস প্রকাশের বিষয়টি তৃপ্তিদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সাগরদিঘিরপাড় ওয়াকওয়েতে দ্রুতই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তবে সব কটি ওয়াকওয়েতে দর্শনার্থীর সমাগম দেখে এসব নির্মাণ করার বিষয়টি সফল বলে মনে হচ্ছে।