আমি সেই সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলব: মাহিয়া মাহি
নির্বাচনী গণসংযোগ চালাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম যাচ্ছিলেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। পথে একটি মাঠে আলুখেতে শ্রমিক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থামেন তিনি। মাঠের মধ্য দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে যান। জানতে চান, সেচের পানির সংকট আছে কি না। সবাই একযোগে সংকটের কথা বলেন। মাহি তাঁদের উদ্দেশে বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে পানির এই সংকট আর থাকবে না। আরেকটা কথা, এই চৌধুরীকে (ওমর ফারুক চৌধুরী) আর আসতে দেওয়া যাবে না।
এই এলাকায় সেচের পানি না পেয়ে গত বছর দুই সাঁওতাল কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেন। নির্বাচনের মাঠে নেমে মাহিয়া মাহি এখন সেই সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন; পাশাপাশি বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর আচার-আচরণ নিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার তিনি গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ও তানোরের মুণ্ডুমালা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন। যেখানেই যাচ্ছেন, গ্রামের নারীরা প্রধানত তাঁকে ঘিরে ধরছেন।
গোগ্রামের ওই এলাকায় রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে মাহিয়া মাহি উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন। কতটুকু উপকার পেয়েছেন, আপনারাই ভালো জানেন। গত ১৫ বছরে আপনারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেননি। এবার আপনাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার পালা। এবার আপনাদের জবাব দেওয়ার পালা।’ সবার ভোট প্রার্থনা করে মাহি বলেন, ‘এখানে যে ডিপ টিউবওয়েলের সিন্ডিকেট আছে, আমি সেই সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলব। আপনাদের ভাগ্যটা এবার পরিবর্তনের পালা। এবার পরিবর্তন করতেই হবে।’
রাজশাহী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহিয়া মাহি বলছেন, এই এলাকার মানুষ গত ১৫ বছর ফারুক চৌধুরীর ভয়ে কথা বলতে পারেননি। তিনি (মাহি) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মানুষের মনে কোনো ভয় থাকবে না। তিনি মানুষকে সম্মান করবেন। নির্বাচনী প্রচার শুরুর দিন থেকে তিনি একই বক্তব্যের ওপরে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা পাল্টা তাঁকে সিনেমাজগতে ফিরে যাওয়ার জন্য পরামর্শমূলক বক্তব্যে দিচ্ছেন।
তানোর উপজেলার টেটনাপাড়া আদিবাসীপল্লিতে শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময় এক বৃদ্ধ নারী মাহিকে বলেন, ‘তুমি আমাদের মুণ্ডুমালার নাতিপুতি। তুমি আমাদেরও মায়া। তুমি এমপি হলে এই এলাকাকে মাদকমুক্ত করবে—একটাই দাবি।’ মাহি উত্তরে বলেন, ‘আমি এই এলাকাকে মাদকমুক্ত করব; পাশাপাশি আমি আপনাদের এলাকার সেচের পানির সংকট দূর করব।’ এ কথা বলে তিনি তাঁর ট্রাক প্রতীকের লিফলেট ধরিয়ে দেন। ভোট চান। নারীদের মুখ নেড়ে আদর করে বলেন, ‘আমি জানি, আপনারা কথা দিলে সেই কথার নড়চড় হয় না। আমাকে ভোট দেবেন।’ তাঁরা ভোট দেওয়ার সম্মতি দেন।
আরেকটা মহল্লায় মেয়েরা ধান সেদ্ধ করছিলেন। সেখানে গিয়ে মাহি নারীদের সঙ্গে সেদ্ধ ধান নাড়াচাড়া করেন। তাঁদের কাজ দেখেন। তারপর ভোট চান। একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করেন। তানোরের মুণ্ডুমালায় একটি মাদ্রাসায় গিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার নিজ হাতে পাতে তুলে দেন।
গোদাগাড়ীর বালিয়াঘাটা হিন্দুপাড়া গ্রামের মানুষ মাহির আগমন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত লোকজনকে বলেন, ‘আমাকে ভোট দেবেন কেন জানেন, আপনাদের সম্মানটা ফিরে পাওয়ার জন্য। এই মানুষটা (ওমর ফারুক চৌধুরী) ১৫ বছর ধরে সংসদ সদস্য। কাউকে সম্মান করেননি। তিনি কাউকে সম্মান করতে জানেন না। শিক্ষককের সম্মান করেননি, মানুষকে সম্মান করেননি। তিনি নেতা-কর্মীদেরও সম্মান করেননি।’
মাহিয়া মাহি আরও বলেন, ‘আপনারা এটা জানেন, গত বছর পানির জন্য দুই আদিবাসী কৃষক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। পানির জন্য কেন মানুষ কষ্ট করবে? সরকার তো এই বরেন্দ্রভূমির জন্য কোটি কোটি টাকা দিয়েছে। এই টাকা কোথায় গেল? আপনারা সবাই যদি আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন, আমি প্রথমেই বরেন্দ্রভূমির পানি সমস্যা নিয়ে কাজ করব, যাতে কোনো কৃষক পানির অভাবে কষ্ট না পান। আর আমার মা–বোনেরা ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যাতে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করব।’
মাহির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওমর ফারুক চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।