কুমিল্লায় গুলিতে কলেজছাত্র নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭, থানায় তিনটি মামলা দায়ের

জামিল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এলাকায় গোলাগুলিতে কলেজছাত্র জামিল হাসান ওরফে অর্ণব হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফজলে রাব্বীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান তাঁর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফজলে রাব্বী (৩০), মো. সুমন (২৮), মো. রাশেদ (৩৮), মো. কাউছার (২০), খলিলুর রহমান (৬০), মো. রিয়াজ (২৬) ও মো. সোলায়মান (৩৮)। এর মধ্যে সুমনের বাড়ি কুমিল্লা নগরের গর্জনখোলা এলাকায়। অন্যদের বাড়ি শাসনগাছা এলাকায়। আসামি ফজলে রাব্বী ও মো. সুমনের কাছ থেকে দুইটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি গুলি ও চারটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অস্ত্র আইনে দুইটি মামলা দায়ের করেছে।

নিহত জামিল হাসান শাসনগাছা মধ্যমপাড়ার আজহার উদ্দিনের ছেলে। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। শাসনগাছা বাস টার্মিনালে একটি বাস কাউন্টারে বসতেন তিনি। জামিল হাসান হত্যাকাণ্ডে তাঁর মা ঝর্ণা আক্তার বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। গতকাল শনিবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যার অভিযোগে মামলাটি তিনি দায়ের করেন। এতে ফজলে রাব্বীকে (৩০) প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ জনকে।

আরও পড়ুন

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার বেলা পৌনে একটার দিকে শাসনগাছা পদচারী–সেতুর পাশে দুই নারীর সঙ্গে ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাসচালকের ঝগড়া হয়। তখন এক নারী মুঠোফোনে বিষয়টি তাঁর আত্মীয় শাসনগাছা এলাকার ফজলে রাব্বীকে জানান। রাব্বী ঘটনাস্থলে গিয়ে মাইক্রোবাসের লাইনম্যান জামাল হোসেন ও চালককে মারধর করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর শাসনগাছা মোল্লাবাড়ির খলিলুর রহমানের ছেলে ফজলে রাব্বীর নেতৃত্বে বেলা পৌনে দুইটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত শাসনগাছা মধ্যমপাড়া তিন রাস্তার মোড়ে গোলাগুলি হয়। তাঁরা জামিল হাসানের বাড়ির দিকে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তখন ফজলে রাব্বীর ছোড়া গুলি এসে জামিলের বুকের বাঁ পাশে লাগে। এতে তিনি মারা যান।

আজ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আসামি ফজলে রাব্বীকে গতকাল দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিটে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের বিষ্ণপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফজলে রাব্বী সেখান থেকে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। রাব্বীকে নিয়ে পরে পুলিশ শাসনগাছা মোল্লাবাড়ির খলিলুর রহমানের নির্মাণাধীন ভবনের লাগোয়া পরিত্যক্ত রান্নাঘরের সিলিংয়ের ওপর থেকে দুইটি ম্যাগাজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও ছয়টি গুলি উদ্ধার করে। আসামি মো. সুমনকে গতকাল দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) লিপি আক্তারের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সুমনের দেওয়া তথ্যমতে শাসনগাছা মোল্লাবাড়ির রশিদ মিয়ার মাটির ঘরের পাশ থেকে একটি পিস্তল, দুইটি ম্যাগাজিন ও একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। আসামি রাশেদকে বুড়িচং উপজেলার নিমসার এলাকা ও কাউছারকে শাসনগাছা মোল্লাবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। খলিলুর ও রিয়াজকে ঘটনার দিনই আটক করা হয়।

পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, ওই ঘটনার পর পুলিশের ছয়টি দল আসামি গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে কাজ শুরু করে। গোলাগুলির সময় তিনজন অস্ত্র ব্যবহার করেন। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন অস্ত্রধারী পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শাসনগাছার ওই ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক বিষয় যুক্ত নেই। বিষয়টি মোল্লাবাড়ি ও মধ্যমপাড়া দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।