আলিনার জন্মদিনে বাড়িজুড়ে শুধুই বিষাদ

প্রতিবছর ঘটা করে আলিনা ইসলাম আয়াতের জন্মদিন পালন করে আসছিল পরিবার
ছবি: সংগৃহীত

শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতের গত চারটি জন্মদিন আনন্দ-উৎসবে পালন করা হয়। বছর ঘুরে আবার তার জন্মদিন এসেছে। আজ বুধবার আলিনার পঞ্চম জন্মদিন। কিন্তু আজ তাদের বাসায় কোনো আয়োজন নেই। কারণ, এই দিনটিতে যাকে ঘিরে আনন্দ-উৎসব হতো, সেই আলিনাই এখন নেই। তাই বাসাজুড়ে এখন শুধুই বিষাদ।

চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকায় পরিবারটির বাস। গত ১৫ নভেম্বর বাড়ির পাশে মক্তবে পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৫ নভেম্বর বাসার ভাড়াটে আবির মিয়াকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তিনি আলিনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

পুলিশ বলছে, ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আলিনাকে অপহরণ করেছিলেন আবির। অপহরণের পর শিশুটি চিৎকার করলে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ ছয় টুকরা করে ফেলে দেন আবির। এর মধ্যে আলিনার দুটি পা ও মাথা উদ্ধার করেছে পিবিআই।

আলিনার জন্ম ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সে ছিল তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। আশপাশের প্রতিবেশীদের কারও শিশুসন্তান নেই। এ কারণে প্রতিবেশীদের সবাই তাকে খুব আদর-স্নেহ করত।

প্রতিবছর ঘটা করে আলিনার জন্মদিন পালন করে আসছিল পরিবার। তার জন্মদিনে কেক কাটা হতো। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা তাকে নানা উপহার দিত। উপহার পেয়ে খুব খুশি হতো আলিনা। আজ তার জন্মদিন ফিরে এলেও বাসাটিতে এখন শোকের ছায়া।

আলিনার বাবা সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাকে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটব? মেয়েই তো নেই। বুকের ধনকে ছয়-ছয়টি টুকরা করেছে খুনি।’

আলিনার দাদা মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নাতনিকে সবাই স্নেহ করতেন। এ কারণে তার জন্মদিনে আশপাশের সবাই উপস্থিত থাকতেন। আলিনা সবার মুখে কেক তুলে দিত। এবার কে কেক তুলে দেবে? আলিনা না থাকায় পুরো পরিবার শোকে ডুবে আছে। তার ফুটফুটে মুখটি সবার চোখে ভাসে। হত্যাকারীর ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের কারও মনে শান্তি নেই।

মা-বাবার সঙ্গে শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত
ছবি: সংগৃহীত

গত বছর আলিনার চতুর্থ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মো. শোয়েব, ফারাহ আক্তার, সুমাইয়া আক্তার, মাইশা আক্তার, মুনমুন আক্তারসহ ১০ থেকে ১৫ জন শিশু-কিশোর অংশ নিয়েছিল। তাদের কেউ আলিনার প্রতিবেশী, কেউ আত্মীয়।

আলিনাদের আত্মীয় শিশু সুমাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলে, ‘আলিনার জন্মদিনে অনেক মজা হতো। তাকে যে মেরেছে, তার শাস্তি চাই।’

নিখোঁজ হওয়ার পর ১০ দিন পর্যন্ত পরিবার জানত না যে আলিনা হত্যার শিকার হয়েছে। তার মা তামান্না ইসলাম বলেন, মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি নিজেকে সান্ত্বনা দিতেন। ভাবতেন, একদিন না একদিন মেয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু এখন তো আর সান্ত্বনার ভাষাও নেই। কাঁদতে কাঁদতে এমন অবস্থা হয়েছে, এখন আর চোখে পানি আসে না।

তামান্না বলেন, মেয়ের জন্মদিনে তিনি জামা কিনে দিতেন। চকলেট, খেলনাসহ নানা উপহার দিতেন। কেক কাটতেন। আজ শুধুই হাহাকার।

আরও পড়ুন

আলিনার বাবা সোহেল রানা স্থানীয় একটি মুদিদোকানের মালিক। আবির ছিল তাঁদের ভাড়াটে। আলিনা তাঁকে ‘চাচ্চু’ বলে ডাকত। সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো দিন ভাবিনি, আমার মেয়েকে আবির খুন করবে। কীভাবে তার লাশ ছয় টুকরা করল? একটাই চাওয়া, আবিরের ফাঁসি।’

আলিনার বাবা বলেন, যত দিন পর্যন্ত আবিরের ফাঁসি কার্যকর না হবে, তত দিন তাঁদের মন শান্ত হবে না। আসামির যাতে ফাঁসি হয়, সে জন্য তিনি শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন।

সোহেল রানা জানান, তাঁর মেয়ের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আজ দোয়া করা হয়েছে। কিছুসংখ্যক দরিদ্র মানুষকে খাবার খাওয়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন