মাদকবিরোধী প্রচারণাসহ ১১ শর্তে সংশোধনের সুযোগ পেলেন মাদক মামলার আসামি
পঞ্চগড়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় শাস্তির পরিবর্তনে সংশোধনের সুযোগ পেয়েছেন বেলাল হোসেন (৩৮) নামের এক ব্যক্তি। তবে এ জন্য তাঁকে ১১টি শর্ত মানতে হবে। আজ রোববার দুপুরে এই রায় দেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মতিউর রহমান।
প্রবেশনে মুক্ত হওয়া আসামি বেলাল হোসেন জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের গুয়াগ্রাম প্রধানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। দুই ছেলে, দুই মেয়ে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বলে জানা গেছে। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন বেলাল হোসেন।
রায়ে বোদা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তাকে আসামির তত্ত্বাবধান করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতি তিন মাস পরপর তাঁকে আসামির কার্যক্রমের ওপর প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে উল্লেখ করা ১১টি শর্তের কোনো একটি এক বছরের মধ্যে লঙ্ঘন হলে তিনি এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করেছেন আদালত।
রায়ে উল্লেখ করা শর্তগুলোর মধ্যে আছে—প্রবেশনের এক বছর কোনো অপরাধ করবেন না, শান্তি বজায় রাখবেন, সদাচরণ করবেন এবং আদালত, প্রবেশন কর্মকর্তা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ডাকলে যথা সময়ে উপস্থিত হতে হবে। পরিবারের নির্ভরশীলদের প্রতি যত্নশীল হবেন ও পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখবেন। মাদক সেবন, কেনাবেচা ও মাদকসেবী বা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মেলামেশা করবেন না। নিরক্ষর হওয়ায় প্রবেশন চলাকালে কাছের গণশিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে স্বাক্ষরজ্ঞানসহ শিক্ষা অর্জন করতে হবে। বাড়ির আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ২০টি ফলদ গাছের চারা রোপণ করতে হবে। প্রবেশন চলাকালে মাসে অন্তত দুবার প্ল্যাকার্ড হাতে নিজ এলাকায় ও স্থানীয় বাজারে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল বেলাল হোসেন ২০টি ইয়াবা বড়িসহ দেবীগঞ্জ থানা-পুলিশের হাতে আটক হন। একই বছরের ৩১ মে আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল হয়। বিচারপ্রক্রিয়ায় ছয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এই রায় দেন।
রায় নিয়ে আসামি বেলাল হোসেন বলেন, আদালত তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার বড় সুযোগ দিলেন। এতে তিনি মা, স্ত্রী-সন্তান সবাইকে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন। জীবনে যে ভুল করেছিলেন, তা আর কখনোই করবেন না। আদালতের দেওয়া সব শর্ত মেনে চলবেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুজ্জামান রাশেদ বলেন, আসামিরা সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে গেলে নানা ধরনের মানুষের সংস্পর্শে এসে নতুন করে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তার চেয়ে প্রবেশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী আদালত আসামিকে শর্তসাপেক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দিয়েছেন। আসামি প্রবেশনকালীন শর্তগুলো পূরণ করে আদালতের এমন রায়কে সমুন্নত রাখবেন বলে তিনি আশা করছেন।