পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলারডুবি, ২ শিশুর লাশ উদ্ধার

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে গেছে। খবর পেয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার হাসাইল এলাকায়
ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পদ্মার শাখা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবে গেছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে উপজেলার হাসাইল এলাকায় নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় লোকজন। তারা হলো নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কাশিপুর এলাকার মো. ফারুকের মেয়ে ফাইজা আক্তার (৬) এবং মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মান্দ্রা এলাকার নজরুল ব্যাপারীর মেয়ে শিপা (১৫)।

আরও পড়ুন

হাসাইল বানারি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবু হালদার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় হাসাইলের চর থেকে যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার হাসাইল ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। তখন দক্ষিণ দশআনি নামের একটি বাল্কহেড বালু আনতে ওই নৌপথ দিয়ে পদ্মা নদীর দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে বাল্কহেডটি ট্রলারের ওপর উঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকজন নিখোঁজ থাকার তথ্য পেয়েছেন।

টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজীব খান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। এখনো তাঁরা ঘটনাস্থলে আছেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসী বাল্কহেডটি আটক করেছেন। কিন্তু বাল্কহেডের চালকসহ অন্যরা পালিয়ে গেছেন।

আরও পড়ুন

দুর্ঘটনার শিকার ট্রলারটির চালক মো. আল আমিন বলেন, ‘৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে রওনা করেছিলাম। দূর থেকে বাল্কহেডটি দেখে চালককে লাইট জ্বালিয়ে ইশারা দিই। তারপরও সোজা আমাদের ট্রলারে উঠিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ট্রলারটি ডুবে যায়। শুনেছি দুজন মারা গেছে। অনেকেই আহত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, বাল্কহেডের বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ জন্য দিন-রাত অবাধে পদ্মার শাখা নদী দিয়ে বাল্কহেড চলাচল করে। পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্বল নজরদারির কারণে বালু ব্যবসায়ী, বাল্কহেডের মালিক ও চালকেরা রাতের বেলায় বাল্কহেড চালাচ্ছেন। এতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।

আরও পড়ুন

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আসলাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম অমান্য করে রাতে বাল্কহেড চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি নতুন যোগদান করেছেন। আইন অমান্য করে কোনো বাল্কহেড চলতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

গত বছর একই জায়গায় বাল্কহেডের ধাক্কায় নৌকা ডুবে লালচান মিয়া (৩৮) নামের একজন জেলের মৃত্যু হয়। গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জের সীমানাঘেঁষা সোনারগাঁওয়ের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় গজারিয়া উপজেলা থেকে আসা একটি পিকনিকের ট্রলার ডুবে যায়। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৬ জন মারা যান।

আরও পড়ুন

চলতি বছরের ৫ আগস্ট পদ্মার আরেকটি শাখা নদীতে লৌহজংয়ের রসকাঠি এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় পিকনিকের আরও একটি ট্রলার ডুবে নারী ও শিশুসহ ১০ জন মারা যান। তাঁরা সবাই সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।

আরও পড়ুন