ভিডিও ফুটেজে দেখা গেল প্রার্থীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন আ.লীগ নেতার ঘনিষ্ঠরা

নাটোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে গতকাল সোমবার অপহরণ করা হয়ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করার সঙ্গে জড়িত অন্তত ১১ জনের পরিচয় জানা গেছে। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তাঁদের শনাক্ত করেছেন।

শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও গাড়িচালকও রয়েছেন। তবে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি।

লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কে আজ মঙ্গলবার নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে আছে। তাঁরা ফুটেজ দেখে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছেন। নিশ্চিত হলেই জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করবেন। ঘটনা তদন্তের স্বার্থে এখনই আর কোনো তথ্য জানাতে চাননি ওই কর্মকর্তা।

গতকাল সোমবার বিকেল চারটার কিছুক্ষণ পর নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিংড়ার দুজন সাংবাদিক ও একজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ভিডিও ফুটেজে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীকে (পাঞ্জাবি পরা) ঘটনার সময় জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের নিচতলায় সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মজনু তালুকদারকে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে কলাপাতা রঙের গেঞ্জি পরা দেখা যায় কলম ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেনকে (কাজল)। আকাশি রঙের গেঞ্জি পরে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপনের ভাগনে সরলকে ঘটনার সময় দেখা যায়। আর হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছিলেন স্থানীয় যুবলীগ কর্মী পিয়াস।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের ব্যক্তিগত সহকারী জাহিদ হাসানকে সাদা গেঞ্জি ও জিনসের প্যান্ট পরে অপহরণে অংশ নিতে দেখা যায়। এ ছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সেতু সরকার, সাধারণ সম্পাদক মজনু তালুকদার, সিংড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নাজমুল হক বাবু, শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেন।

এ ছাড়া লুৎফুল হাবীবের গাড়িচালক সুজনকে (ইটালি গ্রামের নিতাইয়ের ছেলে) কালো গেঞ্জি পরে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত কালো মাইক্রোবাসের চালকের আসনে বসতে দেখা যায়। পরে তিনিই মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নিয়ে যান।

ওই ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়ে সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’

আরও পড়ুন

দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের আগে গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁর ভাই এমদাদুল হক ও সহযোগী আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। তখন দেলোয়ার হোসেন লুৎফুল হাবীবের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন।

লুৎফুল হাবীব উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে তিনিই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। যদিও লুৎফুল হাবীব ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ ঘটনায় খবর ও ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পরপরই পুলিশ আহত প্রার্থীর মেজ ভাই মজিবুর রহমানকে সদর থানায় ডেকে নেয়। সেখানে তিনি বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পরে এটি সদর থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।