টাকাটা নিয়ে গেলে আমি নৈতিকতার কাছে হেরে যেতাম

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকত এলাকায় গত শুক্রবার মো. মিজানুর রহমান নামের এক পর্যটকের ৪৮ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। তিনি বগুড়া থেকে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসেছিলেন। কুয়াকাটার লেম্বুর চর এলাকায় ছবি তুলতে গিয়ে সেই টাকা কুড়িয়ে পান মো. হাবিবুর রহমান নামের সৈকত এলাকার একজন পেশাদার আলোকচিত্রী। তিনি কুয়াকাটার ফটোগ্রাফার মালিক সমিতির সভাপতির কাছে ওই টাকা জমা দেন। হারানো টাকা ফেরত পান মিজানুর। এই ঘটনায় সবার প্রশংসা কুড়াচ্ছেন হাবিবুর রহমান। এ বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে তাঁর সঙ্গে।

মো. হাবিবুর রহমান

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনি টাকাটা কীভাবে পেলেন?

হাবিবুর রহমান: ছবি তোলাই আমার কাজ। এ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই আমার জীবন চলে। সে কারণে সৈকতেই ঘুরে ফিরে মানুষের ছবি তুলতে হয়। ওই দিন ছবি তোলার জন্য কুয়াকাটা সৈকতের লেম্বুর চর এলাকায় যাই। আমি যখন সৈকতের বালুচর দিয়ে হাঁটছিলাম, তখন দেখি একটি টিস্যুতে মোড়ানো কিছু পড়ে আছে। আমি হাত দিয়ে তুলে খুলে দেখি, বেশ কিছু টাকা। আমার তখনই মনে হয়, টাকাটা নিশ্চয় কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা কোনো পর্যটকের। এরপর আমি টাকাটা যার, তাঁকে দেওয়ার জন্য চেষ্টা শুরু করি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কীভাবে টাকাটা প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দিলেন?

হাবিবুর রহমান: আমি টাকাটা পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পর্যটকের কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করি, কারও টাকা হারিয়েছে কিনা। সেখানে এমন কাউকে পাইনি। এরপর আমাদের ছবি তোলার কাজের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করি। তাঁরাও টাকাটা কার, তা খুঁজে বের করতে পারেননি। এরপর টাকাটা নিয়ে আমি ফটোগ্রাফার মালিক সমিতির সভাপতি আল আমীন কাজীর কাছে যাই। তাঁকে টাকা কুড়িয়ে পাওয়ার পুরো ঘটনা খুলে বলি। তিনিসহ পর্যটন পুলিশের কাছে যাই। পুলিশ আমার কাছ থেকে সব শুনে মাইকিং করে। কিন্তু কেউ টাকা হারানোর ব্যাপারে সাড়া দেননি। পরে মিজানুর রহমান নামের একজন পর্যটক এসে দাবি করেন টাকাটা তাঁর। প্রমাণ পেয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর ৪৮ হাজার টাকা মিজানুরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: মানবিক ও দৃষ্টান্তমূলক ভালো কাজটি করতে পেরে আপনার কেমন লাগছে?

হাবিবুর রহমান: আমি টাকাটা না দিলে কেউ আমাকে দোষারোপ করতে পারতেন না। কেউ কিছু বুঝতও না। আমি কুড়িয়ে পাওয়া টাকা নিয়ে যেতে পারতাম। তখন আমি নৈতিকতার কাছে হেরে যেতাম। আমি টাকাটা সত্যিকার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি, এটাই আমার জন্য পরম আনন্দের। এতে আমি যে কতটা শান্তি অনুভব করছি, তা বলে বোঝাতে পারব না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: টাকাটা মালিকের কাছে তুলে দেওয়ার পর তিনি আপনাকে কী বললেন?

হাবিবুর রহমান: মিজানুর রহমান টাকাটা পেয়ে খুশি হয়েছেন। তবে তিনি বেশি খুশি হয়েছেন আমার সততার জন্য। আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। পুরস্কার হিসেবে আমাকে জোর করে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সমাজের অন্যদের জন্য আপনার কিছু বলার আছে?

হাবিবুর রহমান: আমি শুধু এটুকুই বলব, সৎভাবে চলতে হবে, মানবিক মানুষ হতে হবে। সততা আর মানবিকতা থাকলে আমরা সুন্দর একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।