যাত্রীদের প্রাইভেট কারে উঠিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিতেন তাঁরা: পুলিশ
বাসের টিকিট না পেয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে ঢাকায় আসার জন্য একটি প্রাইভেট কারে উঠেছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। গাড়িটি নরসিংদী আসার পর যাত্রী ছদ্মবেশে থাকা চার ছিনতাইকারী তাঁর হাত-পা ও চোখ বেঁধে এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা তুলে নেন। কয়েক দিন পর এক চিকিৎসকের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে।
প্রাইভেট কারে উঠিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে গাজীপুরের গাছা পূর্বপাড়া এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, চাকু ও নগদ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন এসব তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন—বরগুনার আমতলী উপজেলার নজরুল মৃধা (৩৩), দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আবদুর রাজ্জাক (২৪), রফিকুল ইসলাম (২২) ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার তারেক মিয়া (২১)।
এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা আল মামুন ও ৭ অক্টোবর রাতে ভেটেরিনারি চিকিৎসক হেলাল আহমদের এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে মোট ২ লাখ ৯১ হাজার টাকা তুলে নেন ছিনতাইকারীরা। পরে হাত, পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় মহাসড়কের নরসিংদী অংশের শেখেরচরে আল মামুনকে এবং নারায়ণপুরে হেলাল আহমদকে ফেলে পালিয়ে যান তাঁরা।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন বরগুনার আমতলী উপজেলার বলইবুনিয়া গ্রামের নজরুল মৃধা (৩৩), দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ নগর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক (২৪), একই উপজেলার রানীপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম (২২) ও ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই এলাকার তারেক মিয়া (২১)।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা প্রাইভেট কার নিয়ে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে সম্ভ্রান্ত যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতেন। যাত্রী পেলে কিছু দূর নিয়ে হাত, পা ও চোখ বেঁধে নগদ টাকা, মুঠোফোন ও এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিতেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভৈরবের দুর্জয় মোড় থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা আল মামুন ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রাইভেট কারে ওঠেন। এ সময় যাত্রী ছদ্মবেশে ওই গাড়িতে ওঠেন আরও তিনজন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কিছু দূর যাওয়ার পর চালকসহ চারজন ওই ব্যাংক কর্মকর্তার হাত, পা ও চোখ বেঁধে মানিব্যাগ, এটিএম কার্ড ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। এ সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে এটিএম কার্ডের পিন নম্বর নিয়ে দুই দফায় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা তুলে নেন তাঁরা। পরে সোয়া ১২টার দিকে আল মামুনকে ২০০ টাকা পকেটে দিয়ে শেখেরচর এলাকায় ফেলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বরে নরসিংদী মডেল থানায় একটি মামলা করেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন বলেন, ওই ঘটনার পর ৭ অক্টোবর রাত পৌনে আটটার দিকে হেলাল আহমেদ নামের এক ভেটেরিনারি চিকিৎসক শিবপুরের ইটাখোলা মোড় থেকে একটি প্রাইভেট কারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রওনা হন। ওই গাড়িতেও যাত্রী বেশে তিনজন ছিলেন। গাড়িটি মহাসড়কের একটি নির্জন স্থানে যাওয়ার পর ওই চিকিৎসকের হাত, পা ও চোখ বেঁধে নগদ টাকা ও একটি আইফোন ছিনিয়ে নেন তাঁরা। পরে এটিএম কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে এক লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। পরে মহাসড়কের নারায়ণপুর এলাকায় তাঁকে ফেলে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর রাতে শিবপুর থানায় একটি মামলা করেন হেলাল।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একই ধরনের দুটি অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা পুলিশ নড়েচড়ে বসে। অভিযোগ দুটি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক দল মাঠে নামে। ডিবির উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান, আশরাফুল আলম ও জিহাদুল হকের নেতৃত্বে ৪৮টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায়, দুই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা একই দলের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল গাজীপুরের গাছা পূর্বপাড়া থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, ৭০ হাজার টাকা ও দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
মো. আল আমিন আরও বলেন, গ্রেপ্তার নজরুলের বিরুদ্ধে গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী নির্যাতনের চারটি এবং রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছেন কি না, খুঁজতে আসামিদের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে ‘অভিযোগ না নিয়ে ওসি বলেন, বেঁচে আছেন শুকরিয়া করেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চার দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদারকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।