খুলনায় সাড়ে ১০ মাস পর মাঠে নামার ঘোষণা দিলেন বিএনপি নেতা নজরুল
প্রায় সাড়ে ১০ মাস পর বিএনপির হয়ে দলবল নিয়ে আবার মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম ওরফে মঞ্জু। আজ বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।
খুলনা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তাঁরা মাঠে নামছেন বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, বিএনপি একটি গণমানুষের দল। দলের পাশে থেকে তাঁরা গণসমাবেশ সফল করতে চান। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে চান। আর সে কারণেই ব্যথা-বেদনা, পাওয়া না পাওয়া—সবকিছুকে উড়িয়ে দিয়ে তাঁরা চলমান আন্দোলনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর হঠাৎ কেন্দ্র থেকে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ থেকে নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে বাদ দেওয়া হয়। মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক করা হয় আগের জেলা কমিটির সভাপতি শফিকুল আলমকে। আর জেলার আহ্বায়ক করা হয় আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খানকে।
দীর্ঘ ২৮ বছর খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন নজরুল ইসলাম। এর মধ্যে ১৬ বছর সাধারণ সম্পাদক ও ১২ বছর ছিলেন সভাপতি। নতুন ঘোষিত কমিটিতে তাঁকে বাদ দেওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১২ ডিসেম্বর খুলনা প্রেসক্লাবে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে খুলনা মহানগরের ৩১টি ওয়ার্ড কমিটির অধিকাংশেরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি নতুন কমিটির পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান। এরপর কেন্দ্র থেকে নজরুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পর থেকে মূলত রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি ও তাঁর শত শত অনুসারী। ওই ঘটনার পর তাঁর অনেক অনুসারী দলীয় পদ থেকে পদত্যাগও করেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনেও শত শত নেতা-কর্মী নিয়ে খুলনা প্রেসক্লাবে হাজির হন নজরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানসহ পদ থেকে পদত্যাগ করা ও পদবঞ্চিত অনেক নেতাই ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম দাবি করেন, বিএনপির গণসমাবেশ সামনে রেখে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাঁকে মাঠে নামার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ জন্য তিনি লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে সাড়ে ১০ মাস পর আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, খুলনার বিএনপি বলতে মানুষ তাঁদেরই বোঝেন। এ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি হয়তো তাঁদের মূল্যায়ন করবেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় কমিটির কথা শুনে মাঠে নেমেছেন, এখন কেন্দ্র কী করবে, সেটা তাদের (কেন্দ্রের) ব্যাপার।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে দাবি আদায়ের সংগ্রামে একজন পরীক্ষিত, দক্ষ, সর্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, সাহসী রাজনৈতিক কর্মীরা ঘরে বসে থাকতে পারেন না। আর সে কারণেই আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ও মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনটি মতবিনিময় সভা করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতে আমাদের আকাঙ্ক্ষার ভার আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর ন্যস্ত করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনের পর খুলনার গণসমাবেশকে সফল করতে নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে নগরের বিভিন্ন সড়কে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
২২ অক্টোবর খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনায় সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।