ভবদহ অঞ্চলকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার দাবি পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির
যশোরের ভবদহ অঞ্চলকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার দাবি জানিয়েছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি। এ জন্য ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং ও ডেল্টা প্ল্যানের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় নদীর উজানে মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে ভৈরব নদের পুনঃসংযোগ এবং নদী হত্যা ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগ্রাম কমিটির নেতারা এসব দাবি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব চৈতন্য কুমার পাল।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৬ মে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা অভয়নগর উপজেলার ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোআড়িয়া এলাকায় চারটি নদীর মোহনা (গ্যারাইল, ভদ্রা, হাবরখালী ও জিরাবুনিয়া) পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। তখন মোহনা থেকে যশোর সদর পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদী অববাহিকার জনপদ নিশ্চিত মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কার চিত্র উঠে আসে। পরিদর্শনকালে নদীগুলোর গভীরতা ও প্রশস্ততা মাপা হয়। এ সময় দেখা যায় বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোআড়িয়া চারটি নদীর মোহনায় ভাটির সময় ধু ধু চর জেগে ওঠে। অথচ সাত বছর আগে ওই মোহনায় নদীর গভীরতা ছিল প্রায় ২০০ ফুট।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, নদীর উজান এবং মোহনা সচল না থাকলে নদীর মৃত্যু হয়। ভবদহ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত নদীর উজানে ভৈরব নদ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় সাগর থেকে আসা পলিতে নদী এবং মোহনা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার এলাকা যশোর সদর থেকে বারোআড়িয়া মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদী অববাহিকা বিস্তৃত হয়েছে। এর ফলে চার শতাধিক গ্রামে জলাবদ্ধতার হুমকিতে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি যে উদ্ভব হবে, তা দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারবার স্মারকলিপি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সমস্যা সমাধানে নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কর্ণপাত করা হয়নি। বরং নদীকে হত্যা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, ঠিকাদার, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ঘেরমালিকেরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতিবছর জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা লুটের স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’। এই ঘোষণা এই জনপদের মানুষের কাছে তামাশায় রূপান্তরিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড জনমত উপেক্ষা করে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। এই অর্থ সম্পূর্ণ অপচয় হবে এবং বরাবরের মতো জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনৈতিক জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে বারোআড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়েছে। এখনো ভবদহ স্লুইসগেটের মুখ পর্যন্ত চার ফুট উচ্চতায় জোয়ার আসছে। ফলে এখনই টিআরএম চালু করলে সুফল পাওয়া যাবে। এই জনপদ স্থায়ী বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী ৫ জুলাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং বারোআড়িয়া মোহনা থেকে ভবদহ অঞ্চল পর্যন্ত আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা ঘোষণা দেওয়া হয়।
সাংবদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী, সদস্য অনিল বিশ্বাস, জিল্লুর রহমান ভিটু, পারভীনা বেগম, চৈতন্য বিশ্বাস, আজিজ সরদার, মিজানুর রহমান, আজিজুর রহমান, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ।