১৮ নারীসহ ৪০ জন কারাগারে, নারী-পুরুষশূন্য গ্রামে ধান কাটা বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই দল গ্রামবাসী দা-বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ১৮ নারীসহ ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে দুই দল গ্রামবাসী দা-বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ওই সংঘর্ষে জড়িত অভিযোগে ওই দিন দুপুর থেকে রাতের মধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রামের ৪০ নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বাদী হয়ে এ ৪০ জনসহ ১৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছে। এতে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে গ্রামটি নারী-পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের শত শত একর জমির ধান কাটা বন্ধ হয়ে পড়েছে।

গ্রেপ্তার ৪০ জনকে আজ শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা রাশেদ (৬০) মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার (৩৫) বিরোধ চলে আসছে। গ্রামের ধান শুকানোর ২০ শতাংশ খাসজমি নিয়ে ৪ বছর আগে তাঁদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। খাসজমিটি নিয়ে পুরো গ্রামের লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আশপাশের গ্রামের লোকজনও দুই পক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে উভয় পক্ষের লোকজন দা-বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে জেলা সদর ও সরাইল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শটগানের গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হোসেন, এসআই বাবুল হোসেন ও চার পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) এবং উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ আহত হন। সংঘর্ষের পরপর পুলিশ গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১২ নারীসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আরও ৬ নারীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সরাইল থানার এসআই বাবুল হোসেন বাদী হয়ে ১৪৫ জনের নাম উল্লেখ এবং ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছেন।

গ্রামবাসী জানান, নারী-পুরুষকে সমানতালে গ্রেপ্তার করায় পরমানন্দপুর গ্রামের নারী-পুরুষ এলাকাছাড়া হয়ে পড়েছেন। গা ঢাকা দিয়েছেন গ্রামের কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সবাই। এতে গ্রামের শত শত একর জমির পাকা বোরো ধান কাটা বন্ধ হয়ে পড়েছে।

গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হান্নান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এখানে মাত্র ধান কাটা শুরু হয়েছিল। সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তারের আতঙ্কে গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। বলা চলে, গ্রামটি জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে। অনেকের কাটা ধান মাঠে পড়ে আছে। অনেকের পাকা ধান জমিতে ঝরে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেকেরই জীবন চালাতে বড় ধরনের সমস্যা হবে। কারণ, এটি হাওর এলাকা, এখানে শুধু একটি ফসলই হয়ে থাকে।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই গ্রামের বিভিন্ন গোত্রের লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। গ্রামে নিরপেক্ষ কোনো লোক নেই। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজনও জড়িয়ে গেছেন। সংঘর্ষ বাধলে নারী-পুরুষ সমানতালে অংশ নেন। আমরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করছি। বর্তমানে গ্রামের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গ্রামে অভিযান অব্যাহত আছে।’