ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান শুকানোর খাসজমি নিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আটক ২৬

খাসজমি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সরাইলের পাকশিমুল ইউনিয়নে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পরমানন্দপুর গ্রামেছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ধান শুকানোর খাসজমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নারী ও পুরুষ আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের আগমুহূর্তে উপজেলার হাওরবেষ্টিত পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপির দলছুট সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত উকিল আবদুল সাত্তার ভূঁইয়ার ভাতিজা, পরমানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাসান ভূঁইয়া ও স্থানীয় আইয়ুব খানের লোকজন দা-বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে সরাইল থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় ১৪ জন পুরুষ ও ১২ জন নারীকে আটক করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের রাশেদ মিয়ার (৬০) সঙ্গে একই গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার (৩৫) বিরোধ দীর্ঘদিনের। গ্রামের ধান শুকানোর ২০ শতাংশ খাসজমি নিয়ে চার বছর আগে তাঁদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। জমিটি ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে রাশেদ মিয়ার পরিবারের দখলে আছে। ওই জমি নিয়ে গ্রামের শত শত মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ঈদের দিন থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করে উভয় পক্ষকে ওই জমিতে যেতে নিষেধ করে আসছিল পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী কিছু বাসিন্দা জানান, আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ট্রাক্টর দিয়ে ওই জমিতে মাটি ভরাট করতে শুরু করেন কাঞ্চন মিয়া। বিষয়টি দেখে বাধা দেন রাশেদ মিয়া ও তাঁর লোকজন। কিছুক্ষণ পর স্থানীয় হাজি মকসুদ আলী উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন মাঠ ও সড়কে উভয় পক্ষের লোকজন দা-বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

প্রয়াত সংসদ সদস্য উকিল আবদুল সাত্তার ভূঁইয়ার ভাতিজা আবদুল হাসান ভূঁইয়া ও স্থানীয় আইয়ুব খানের লোকজন দা-বল্লম নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। আজ সকালে সরাইলের পরমানন্দপুর গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

সংঘর্ষের খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেসবা উল আলম ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের বিভিন্ন গোত্রের নেতৃত্বস্থানীয় লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান যে রাশেদ মিয়ার পক্ষের লোকজনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রয়াত উকিল আবদুল সাত্তার ভূঁইয়ার ভাতিজা আবদুল হাসান ভূঁইয়া। আর কাঞ্চন মিয়ার পক্ষের লোকজনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় আইয়ুব খান ও পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

আবদুল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, কাঞ্চন মিয়ার নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক আজ ভোরে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের লোকজনের ওপর হামলা করেন। তাঁরা সংগঠিত ছিলেন বলে তাঁদের বসতবাড়িতে হামলা করতে পারেননি। কাঞ্চন মিয়া কাতারপ্রবাসী। কয়েক মাস পরপর গ্রামে আসেন। আইয়ুব খানকে নিয়ে নানা দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ করেন। তাঁরা শান্ত গ্রামটিকে অশান্ত করে তুলেছেন। তাঁদের অত্যাচারে গ্রামের শান্তিপ্রিয় কয়েকটি বংশের লোক সংগঠিত হয়েছেন।

তবে আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা পক্ষকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু আমি মারামারি-কাটাকাটির মধ্যে নেই। এলাকায় শান্তির লক্ষ্যে আমি অনেক দিন ধরে কাজ করছি।’

আওয়ামী লীগের নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওই গ্রামের বাসিন্দা নই। ওই গ্রামে শান্তির লক্ষ্যে গতকাল (বুধবার) সেখানে গিয়েছি। আজও এসেছি। আমি সংঘাতের পক্ষে নই। তাঁরা আজ ভোরে সংঘর্ষে জড়িয়ে যান। আমি কোনো পক্ষের নই।’

সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিরা কিশোরগঞ্জের ভৈরবে, জেলা সদরের বিভিন্ন হাসপাতালে ও স্থানীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুরুতর আহত হাবিব মিয়া (৫০), ওসমান মিয়া (৫৫), সুভেল মিয়া (২৭), শামীম হোসেন (৫৫), বরকত উল্লাহ (১৭), রশির মিয়া (৫০), রাহিম মিয়া (২৬), মঈন উদ্দিন (২৬) ও কাঞ্চন মিয়াকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিন শতাধিক মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আ স ম আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খাসজমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪ পুরুষ ও ১২ নারীকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে ১৪টি শটগানের গুলি ও তিনটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। গ্রামে অভিযান অব্যাহত আছে।