একের পর এক দুর্ঘটনায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

শুক্রবার ভোরে জয়পুরহাটের তিলকপুর স্টেশন অতিক্রমের সময় আন্তনগর একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়
ছবি: প্রথম আলো

মাত্র ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের দুই স্টেশনে দুটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার কারণে বিভিন্ন স্টেশনে একাধিক ট্রেন আটকা পড়ায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। এতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন ঈদে বাড়িতে ফেরা বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা। বগুড়ার সান্তাহার জংশন স্টেশনসহ অন্যান্য স্টেশনে পরিবার-পরিজন নিয়ে শত শত ট্রেন যাত্রীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবশ্য একাধিক ট্রেনের দুর্ঘটনার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন সাধারণ যাত্রীরা।

গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের চাকার এক্সেল গার্ড ভেঙে যায়। এতে ট্রেনটি প্রায় দুই ঘণ্টা আটকা পড়ে সান্তাহার জংশন স্টেশনে। স্টেশনের প্রকৌশল বিভাগ (ক্যারেজ) দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে ট্রেনের ভেঙে যাওয়া অংশটি মেরামত করে। এ সময় প্রচণ্ড গরমে চরম দুর্ভোগ পোহান ট্রেনের ভেতরে ও ছাদের ওপরে থাকা যাত্রীরা। খাওয়ার পানির জন্যও তাঁদের হাহাকার করতে দেখা যায়। এ ছাড়া গরম সহ্য করতে না পেরে কামরার মধ্যে অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন

আরও পড়ুন

সান্তাহার জংশন স্টেশনের মাস্টার রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনের ৭৩৪০ নম্বর কামরার একটি চাকার এক্সেল গার্ড ভেঙে যায়। ট্রেনটি স্টেশনে আসার পর ট্রেনের পরীক্ষক বিভাগের লোকজন এক্সেল গার্ড ভাঙার বিষয়টি দেখতে পান। পরে ট্রেনটি না ছাড়ার পরামর্শ দেন তাঁরা। এরপর ওই বিভাগের লোকজন ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ করেন।

পরীক্ষক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সোয়েল রানা বলেন, তাঁর বিভাগের লোকজন অক্লান্ত পরিশ্রম করে ট্রেনটি চালুর ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে না পারলে যেকোনো সময় আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মেরামতের কাজ শেষে রাত পৌনে ১০টার দিকে ট্রেনটি সান্তাহার স্টেশন ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

আরও পড়ুন

এদিকে শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে চারটার দিকে সান্তাহার জংশন স্টেশনের পাশে তিলকপুর স্টেশনে ঢাকাগামী আন্তনগর একতা এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা রেলপথে প্রায় আট ঘণ্টা সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি কামরা তিলকপুর স্টেশন অতিক্রমের সময় লাইনচ্যুত হয়। পরে সান্তাহার ও পার্বতীপুর থেকে রেলওয়ের উদ্ধারকর্মীরা গিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করেন। প্রায় আট ঘণ্টা পর ওই রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুর্ঘটনার পরে সান্তাহার স্টেশনে চিলাহাটিগামী আন্তনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ভোর পৌনে পাঁচটা থেকে, পঞ্চগড়গামী আন্তনগর দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন ভোর পাঁচটা থেকে এবং ঢাকাগামী আন্তনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন ভোর পৌনে পাঁচটা থেকে আক্কেলপুর স্টেশনে আটকা পড়ে।

দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ের অবহেলা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। যেভাবে যাত্রীরা অবৈধভাবে ট্রেনের ছাদে ও কামরায় ভ্রমণ করছেন, সেটি বন্ধ করা না গেলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতে পারে।

সান্তাহার জংশন স্টেশনের নিরাপত্তা পরিদর্শক নুর এ নবী প্রথম আলোকে বলেন, যে পরিমাণ যাত্রী ট্রেনের ছাদে ও কামরায় ওঠেন, তা স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তিনি বলেন, অবৈধ যাত্রীদের কারণে টিকিট কেটেও বৈধ যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে পারছেন না।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে রেলওয়ের রাজশাহী অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি।