নোয়াখালীর নারীনেত্রীর সাক্ষাৎকার

মেয়েরা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারলে নির্যাতনের ঘটনা কমে আসবে

নোয়াখালীতে গত তিন মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন, ৩ মাসে জেলার ২৬ জন শিশু ও নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জানুয়ারি থেকে মার্চে এ সংখ্যা ছিল ১৩। এসব বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীন।

লায়লা পারভীন
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনা গত তিন মাসে দ্বিগুণ বেড়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার নারী অধিকার জোটের প্রতিবেদনে তথ্য উঠেছে। নির্যাতনের ঘটনা কেন বাড়ছে বলে আপনি মনে করেন?

লায়লা পারভীন: গোড়া থেকে যদি আমরা ভাবি, তাহলে আমাদের বলতে হবে, নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে দারিদ্র্য, কুসংস্কার, অপরাজনীতির কারণে। আমাদের ছেলেরা লেখাপড়া না করে বখাটেপনা করে বেড়াচ্ছে। তরুণেরা বিভিন্ন দলের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ করে বেঁচে যাচ্ছে। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, সেটি নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

কোন শ্রেণির শিশু ও নারীরা বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন? এ রকম কোনো পরিসংখ্যান আছে কি?

লায়লা পারভীন: এ বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর প্রতি চোখ বোলালে দেখা যায়—অপেক্ষাকৃত গ্রাম এলাকার নারী, যাঁরা পড়ালেখার সে রকম সুযোগ পাননি বা কোনোমতে স্কুল পর্যন্ত গিয়েছেন, তাঁরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বেশি। আবার ইদানীং মুঠোফোনে প্রলোভনে পড়েও কিশোরী মেয়েরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্বাবলম্বন ও সুশিক্ষার অভাব বড় কারণ।

প্রশ্ন:

নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় দায়ের হওয়া মামলার তুলনায় আদালতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

লায়লা পারভীন: থানায় একটা রাজনৈতিক প্রভাব থাকে। তা ছাড়া থানায় গেলে নানা হয়রানির শিকার হওয়ার যে অভিযোগ বরাবরই শোনা যায়, এটাও একটা কারণ হতে পারে। আদালতে মামলা করা সহজ। আবার সেখানে উদ্দেশ্যমূলক অনেক মামলাও হয়। এ কারণে আদালতে মামলার সংখ্যা বেশি।

প্রশ্ন:

নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমিয়ে আনতে নারী অধিকার জোট কোনো ভূমিকা পালন করছে কি?

লায়লা পারভীন: নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে শিশু ও নারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে কাজ করছে নারী অধিকার জোট। গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করে মায়েদের, ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের নারী ও শিশু নির্যাতনবিরোধী আলোচনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবছর নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন করা হয়।

প্রশ্ন:

নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধের উপায় কী? কী করলে এ ধরনের ঘটনা কমতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

লায়লা পারভীন: বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা, মেয়েরা যাতে শিক্ষা থেকে ঝরে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা এবং মেয়েদের কর্মমুখী শিক্ষায় উৎসাহিত করা উচিত। যাতে মেয়েরা পড়ালেখা করে অর্থ উপার্জন করে স্বাবলম্বী হতে পারে। মা–বাবা তাদের বোঝা মনে করে যেন অপাত্রে বিয়ে দিতে না পারেন। বিয়েসহ নানা বিষয়ে যখন মেয়েরা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবে, তখন নির্যাতনের ঘটনা কমে আসবে।