পাবনায় মেছো বাঘ পিটিয়ে মারল গ্রামবাসী

এভাবেই পিটিয়ে হত্যা করা হয় মেছো বাঘটিকে। আজ বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সড়ইকান্দি গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি মেছো বাঘকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সড়ইকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, জ্যান্ত অবস্থায় ধরার পর অত্যুৎসাহী কিছু ব্যক্তি মেছো বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাবনার বন্য প্রাণীবিষয়ক সংগঠন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন কমিউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ বলেন, মেছো বিড়ালকে ‘মেছো বাঘ’ বলে ডাকাই প্রাণীটির জন্য বড় হুমকির কারণ হয়েছে। এটি একটি বিপন্ন প্রাণী। মেছো বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম Prionailurus viverrinus, ইংরেজি নাম ফিশিং ক্যাট। এরা মাছ ছাড়া অন্য কোনো পশুপাখি খায় না। এরপরও সাধারণ জনগণ বিষয়টি না বুঝে এদের হত্যা করে। দিন দিন তাই এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। প্রাণীটি রক্ষায় গ্রামে গ্রামে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুপুর আড়াইটার দিকে কয়েকজন কৃষক মাঠে কাজ করছিলেন। এ সময় মহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক ধানখেতে মেছো বাঘটিকে দেখতে পেয়ে চেঁচামেচি শুরু করেন। এতে আরও লোকজন এগিয়ে এলে মেছো বাঘটি ভয়ে দৌড় দিয়ে একটি পানির পাইপে ঢুকে যায়। লোকজন তখন খুব সহজে পাইপের মুখে বস্তা লাগিয়ে জ্যান্ত অবস্থায় মেছো বাঘটিকে আটক করেন। পরে মেছো বাঘটির চার পা বাঁশের সঙ্গে বেঁধে গ্রামে নিয়ে আসেন। পরে কিছু উৎসাহী ব্যক্তি মেছো বাঘটি দেখে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করে ও পেটাতে থাকে। এতে কিছুক্ষণ পর মেছো বাঘটি মারা যায়।

ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি বাঁশের সঙ্গে চার পা আটকে বেঁধে রাখা হয়েছে মেছো বাঘটিকে। এক ব্যক্তি মেছো বাঘটির গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে টানাটানি করছেন। আরেকজন ধারালো একটি হাঁসুয়া নিয়ে মেছো বাঘটিকে কাটার জন্য ভয় দেখাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

সড়ইকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আলাল হোসেন জানান, মেছো বাঘটি উঠতি বয়সের ছিল। জ্যান্ত অবস্থাতেই গ্রামে ধরে আনা হয়। তবে মানুষের অত্যাচারে বাঘটি অতিষ্ঠ হয়ে কিছুটা হিংস্রতা দেখাচ্ছিল। এতেই মেছো বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি ঠিক হয়নি ভেবে পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সরদার বলেন, এ ধরনের মেছো বাঘ আগে গ্রামে দেখা যায়নি। এই প্রথম দেখা গেল। তবে মেছো বাঘটিকে হত্যা করা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে এমন যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

আরও পড়ুন

ঈশ্বরদী থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানার আগেই গ্রামবাসী আতঙ্কিত হয়ে মেছো বাঘটিকে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

ঈশ্বরদী উপজেলা বন কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মৃত মেছো বাঘটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা জানার আগেই মেছো বাঘটি মারা গেছে। তবে ভবিষ্যতে এমন যেন না হয়, সে বিষয়ে গ্রামবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁদের সচেতনতা বাড়াতে আরও কাজ করা হবে।

আরও পড়ুন