গতকাল বুধবার সকালে বাঘটির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, দেড় মাস ধরে গুরুতর অসুস্থ বাঘিনীর চিকিৎসা চলছিল। রাজধানীর কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের সাবেক প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এ বি এম শহীদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে ও পরামর্শে বাঘটির নিয়মিত চিকিৎসা করছিলেন পার্কের বন্য প্রাণী চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মনিরুল এইচ খান প্রথম আলোকে বলেন, বাঘের আয়ুষ্কাল ২০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

প্রকৃতিতে থাকা বাঘের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেশি হয়। সে তুলনায় আবদ্ধ পরিবেশে থাকা বাঘের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সাধারণত কম থাকে। শুধু বার্ধক্যের কারণেই ট্রিপোনোসোমিয়াসিস, লিভার ডিজিজ ও যক্ষ্মা রোগ হয়, বিষয়টি এমন নয়।

সাফারি পার্কের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বেশ কিছু বাঘ ফ্যালকন ট্রেডার্স নামের একটি বন্য প্রাণী বিপণন এজেন্সির মাধ্যমে পার্ক কর্তৃপক্ষ আমদানি করে। এরপর গত ১০ বছরে বিভিন্ন সময় এসব বাঘ থেকে বাচ্চার জন্ম হয়। দুটি বাচ্চা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। বর্তমানে বাচ্চা দুটোর বয়স পাঁচ বছরের কাছাকাছি। সূত্র জানায়, গত বুধবার বাঘটি মারা যাওয়ার পর সাফারি পার্কে এখন বাঘের সংখ্যা আট। এর মধ্যে তিনটি পুরুষ ও পাঁচটি স্ত্রী বাঘ। এ ছাড়া আছে বিরল সাদা রঙের একটি বাঘ।

গত বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা, ১টি বাঘ ও ১টি সিংহী মারা যায়। এসব প্রাণী মারা গেলেও সে সময় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়নি। এমনকি বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া প্রাণীর মৃত্যুর তথ্য যাচাই করতে গেলে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি এগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করেছিলেন। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন প্রাণীর মৃত্যুর তথ্য যাচাইয়ের জন্য সাফারি পার্কে সশরীর উপস্থিত হন। এরপর এতগুলো প্রাণীর মৃত্যুর তথ্য গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে পার্ক কর্তৃপক্ষ।

এরপর প্রাণীর মৃত্যুর কারণ জানতে বন বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তর পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এসব তদন্তে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহেলা পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান, বন্য প্রাণী পরিদর্শক সরোয়ার হোসেন, বন্য প্রাণী চিকিৎসক জুলকারনাইন মানিক ও পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবিরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাও করে বন বিভাগ।