থানচিতে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে র‍্যাবের ৮ সদস্য আহত, ৫ জঙ্গি গ্রেপ্তার

জঙ্গিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন র‍্যাবের মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেন। মঙ্গলবার বিকেলে থানচি সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে তুমাটংগি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বান্দরবানের থানচির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) ও ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া’ জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে র‍্যাবের আট সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বান্দরবানে পাঠানো হয়েছে। এ সময় শারক্বীয়ার পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার সকালে থানচির দুর্গম রেমাক্রি খালের সেতু এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নামে র‍্যাব ও সেনাবাহিনী। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে এখনো সেখানে থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। বিকেলে থানচি উপজেলা সদরের চার কিলোমিটার দূরে তুমাটংগি এলাকায় এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে র‍্যাবের মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেন এসব তথ্য জানান।

আরও পড়ুন

ব্রিফিংয়ে র‍্যাবের মহাপরিচালক খুরশীদ হোসেন বলেন, কেএনএফ ও শারক্কীয়ার একটি দল থানচি উপজেলা সদর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে রেমাক্রি খালের সেতু এলাকায় গতকাল সোমবার অবস্থান নেয়। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি জানতে পেরে র‍্যাব ও সেনাবাহিনী সকালে সেখানে অভিযানে নামে। অভিযানে কেএনএফ ও শারক্কীয়ার জঙ্গিরা গুলি ছুড়লে সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোড়েন। এর পর থেমে থেমে চলে গোলাগুলি। এতে র‍্যাবের আটজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বান্দরবানে পাঠানো হয়েছে। অভিযানে শারক্কীয়ার পাঁচজন জঙ্গিকে পাওয়া গেছে। তবে কেএনএফের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। অভিযান এখনো চলমান। সেখানে এখনো থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে।

আরও পড়ুন

র‍্যাবের মহাপরিচালক আরও বলেন, কেএনএফ ও শারক্কীয়ার বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরুর পর ৮০ শতাংশ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাহাড় ও সমতল মিলে ৪৩ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আজকের ৫ জনসহ পাহাড় থেকে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। একই সঙ্গে কেএনএফের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় হিজরতের নামে নিখোঁজ হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে গ্রেপ্তার ৪৩ জঙ্গির নাম আছে।

খুরশীদ হোসেন আরও বলেন, অভিযানে জঙ্গিরা কেএনএফ সন্ত্রাসীদের যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থায়ন করত, সেই নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন শারক্কীয়া ও কেএনএফের নেটওয়ার্ক এবং গোপন আস্তানা শনাক্ত করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

তুমাটংগিতে ব্রিফিংয়ের সময় র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মো. কামরুল হাসান, গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মশিউর রহমান, সেনাবাহিনীর রুমা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহরিয়ার কবির, র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৩ অক্টোবর থেকে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সমন্বিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে র‍্যাব, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‍্যাবের তথ্যমতে, বান্দরবানের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ তাদের গোপন প্রশিক্ষণ ছাউনিতে শারক্কীয়ার জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া থেকে শারক্কীয়ার দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে কেএনএফের প্রশিক্ষণ ছাউনিতে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের ভিডিও চিত্র পাওয়া যায়। গত ৩১ ডিসেম্বর রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের আর্থাপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর হামলা চালায় কেএনএফ। এ সময় সেনাবাহিনীর পাল্টা গুলিতে কেএনএফের একজন নিহত হয়। এ ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে থানচিতে আবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটল।

আরও পড়ুন