আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার

‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’–এর ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে আজ বুধবার তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকেছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ও সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ পাঁচ দাফা দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনকারী শিক্ষিক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলম। এ সময় তিনি ১৭ মার্চের মধ্যে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান এবং প্রাধ্যক্ষ সাব্বির আলম স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন বলে জানান। যদি পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁদের ১৮ মার্চের মধ্যে অব্যাহতি দেওয়া হবে। উপাচার্যের এমন আশ্বাসে অবরোধ তুলে নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আলোচনায় উপস্থিত থাকা একাধিক ডিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানান, দুই পক্ষের আলোচনা খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে। ১৭ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তাঁরা (প্রক্টর ও প্রাধ্যক্ষ) পদত্যাগ করবেন। সেটাই মনে হয় শিক্ষক হিসেবে সম্মানজনক হবে। আর পদত্যাগ না করলে ১৮ মার্চ তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য মো. নূরুল আলম এবং সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এর আগে আজ বুধবার সকাল নয়টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’-এর ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে তৃতীয় দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছিল। গত সোমবার সকাল পৌনে নয়টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তদন্ত চলাকালে ধর্ষণের ঘটনায় সহায়তার অভিযোগে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ সাব্বির আলমকে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবরোধের এই তিন দিন উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনিক ভবনের কোনো কর্মকর্তাকে ভবনটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে একধরনের প্রশাসনিক স্থবিরতা দেখা দেয়।

আরও পড়ুন

পাঁচ দফা দাবির মধ্যে আছে পড়ালেখা শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা, নিপীড়নে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বহিষ্কারাদেশের প্রজ্ঞাপন জারি ও অফিস আদেশ প্রণয়ন, যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে উত্থাপিত সব অমীমাংসিত অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা এবং মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

অবরোধে অংশ নেওয়া বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আ র ক রাসেল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বিরুদ্ধে এর আগে অনেক ধরনের অভিযোগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে শিক্ষার্থীরা মাদক বহন করেছিলেন। সেটা তিনি (প্রক্টর) ধামাচাপা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষক ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন, সেটিও তিনি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন।

শিক্ষার্থী রাসেল বলেন, নিপীড়নের দায়ে বরখাস্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছিল, সেটিও ভুক্তভোগীকে দিয়ে দায়মুক্তি পত্র লেখানোর অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি ধর্ষণের ঘটনায় তিনি প্রথমে বলেছিলেন, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর তাঁর হেফাজতে রয়েছেন। পরে তিনি (প্রক্টর) জানান, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর পালিয়ে গেছেন। বিভিন্ন ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ও দায়িত্বে অবহেলার বিষটি তাঁরা উপাচার্যের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মীর মশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে হলসংলগ্ন পাশের জঙ্গলে নিয়ে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে ভুক্তভোগী নারীর স্বামী আশুলিয়া থানায় ছয়জনকে আসামি মামলা করেন।

আরও পড়ুন